শিরোনাম
ঢাকা, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর আরোপিত আকাশছোঁয়া আমদানি শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পরাশক্তি চলতি সপ্তাহান্তে সুইজারল্যান্ডে বাণিজ্য আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প শুক্রবার এ ইঙ্গিত দিলেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘চীনের ওপর ৮০ শতাংশ শুল্ক ঠিকঠাক মনে হচ্ছে।’
চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক বর্তমানে ১৪৫ শতাংশ, কিছু পণ্যের ওপর ক্রমবর্ধমান শুল্ক ২৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনের এই কঠোর শুল্কের জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এটা স্কট বি.-এর ওপর নির্ভর করছে।’ অর্থাৎ মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের ওপর, যিনি এই উত্তপ্ত বাণিজ্য দ্বন্দ্ব প্রশমনের লক্ষ্যে এই সপ্তাহান্তে জেনেভায় চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং-এর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারও এই আলোচনায় অংশ নেবেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এখনো তার অবস্থানে অটল যে তিনি একতরফাভাবে চীনের ওপর শুল্ক কমাবেন না। আমাদের চীনের পক্ষ থেকেও কিছু ছাড় দেখতে হবে,’।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শুধু ৮০ শতাংশের সংখ্যাটি উল্লেখ করেছেন। দেখা যাক, এই সপ্তাহান্তে কী হয়। অত্যন্ত উচ্চ শুল্ক বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে একটি কার্যকর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার সমান, যেখানে বেসরকারি শিপিং তথ্য ইতোমধ্যেই চীন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবাহে কমেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
একটি ভালো ইঙ্গিত:
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)-এর সিনিয়র উপদেষ্টা এবং মার্কিন সরকারে ইউএস-চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড সিকিউরিটি রিভিউ কমিশনের সদস্য বিল রেইনশ বলেছেন, ‘সম্পর্ক ভালো নয়,’। দুই দিকেই বাণিজ্য-বাধাস্বরূপ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সম্পর্ক অবনতির পথে। কিন্তু আলোচনার উদ্যোগটাই ইতিবাচক।
চায়না ইউরোপ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলের অর্থনীতি ও অর্থ বিভাগের অধ্যাপক জু বিন এএফপিকে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি মূলত দেখানোর জন্য যে উভয় পক্ষই কথা বলছে এবং সেটিই এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীনই একমাত্র দেশ যেখানে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে সমানুপাতিক শুল্ক আরোপ করেছে।’
নিজেদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করে বেইজিং জোর দিয়ে বলেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমে শুল্ক তুলে নিতে হবে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট বলেছেন, সুইজারল্যান্ডে বৈঠকগুলোর মূল লক্ষ্য হবে ‘ উত্তেজনা প্রশমন,’ এটি কোনো ‘বড় বাণিজ্য চুক্তি’ নয়।
জেনেভা-ভিত্তিক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রধান শুক্রবার আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে এটিকে ‘উত্তেজনা হ্রাসের দিকে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
ডব্লিউটিও -এর মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা বলেছেন, ‘বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে টেকসই সংলাপ বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে, ভূ-রাজনৈতিক লাইনে বিভক্তি রোধ করতে এবং বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি রক্ষা করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
শুক্রবার সুইস প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার-সাটারও একটি আশাব্যঞ্জক মন্তব্য করে বলেন, ‘আমাদের এখন আশা করা উচিত।’
গতকাল তিনি ইটালিতে ছিলেন। সপ্তাহান্তে তিনিও জেনেভায় যাবেন।
১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক:
মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট এবং হে লিফেং-এর বৈঠকটি এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন এর মাত্র দুই দিন আগে ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন। গত মাসে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক শুল্ক আরোপের পর থেকে কোনও দেশের সাথে এটিই প্রথম চুক্তি।
পাঁচ পৃষ্ঠার, আইনত বাধ্যতামূলক নয় এমন এই নথিটি উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক শুল্ক থেকে খাত-নির্দিষ্ট ছাড়ের জন্য আলোচনা করতে ইচ্ছুক। যেমনটি ব্রিটিশ গাড়ি, ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে হয়েছে। এসবের পরিবর্তে যুক্তরাজ্য মার্কিন গরুর মাংস ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের জন্য বাজার খুলে দিতে সম্মত হয়েছে।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি লেভিট বলেন, বেশিরভাগ ব্রিটিশ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক বহাল রয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সিএসআইএস -এর রেইনশ বলেন, জেনেভা আলোচনার একটি বড় সমস্যা হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আলোচনার কৌশলে তীব্র পার্থক্য।
রেইনশ আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের পদ্ধতি সাধারণত উপরের দিক থেকে শুরু হয় । তিনি চান চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে এবং মনে করেন তারা যদি একসঙ্গে বসেন, তাহলে বড় কোনো চুক্তি করে ফেলতে পারবেন, তারপর অধীনস্থরা বিস্তারিত ঠিক করে নেবেন।’
তবে, ‘চীনারা ঠিক উল্টো, তারা চায় নিচু পর্যায়ে সব কিছু নিয়ে আগে আলোচনা ও চূড়ান্ত সমঝোতা হোক, তারপর কোনো শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হোক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।