শিরোনাম
ঢাকা, ৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : জার্মানির ফ্রিডরিশ মের্ৎস শুক্রবার প্রথমবারের মতো ব্রাসেলস সফরে যাচ্ছেন। ইউরোপ যখন বৈশ্বিক সংকটের ঘূর্ণিতে দিশেহারা, ঠিক তখন বার্লিনে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সুবাদে নতুন গতি সঞ্চারের আশা করছে ইউরোপ।
ব্রাসেলস থেকে এএফপি জানায়, প্যারিস ও ওয়ারশতে পরপর সফর করে প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার ইঙ্গিত দেওয়ার পর, ইউরোপীয় রাজধানীতে তার এই দ্রুত সফর স্পষ্ট করে যে, রাজনৈতিক অচলাবস্থার মাসগুলো পেরিয়ে ইউরোপে জার্মানির ভূমিকা পুনরুদ্ধারে তিনি বদ্ধপরিকর।
'অনেক দেরি হয়ে গেছে,' মন্তব্য করেন এক ইইউ কূটনীতিক। 'আমরা অপেক্ষা করছি এমন এক শক্তিশালী জার্মানির, যারা সামনে থাকা কঠিন কাজগুলো সামাল দিতে পারবে।'
তবে জার্মানির ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রত্যাবর্তন সহজ হবে না বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
অভিবাসন সীমিত করার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচিত এই রক্ষণশীল চ্যান্সেলরের প্রথম পদক্ষেপগুলোর একটি ছিল—জার্মানির সীমান্ত থেকে অধিকাংশ আশ্রয়প্রার্থীকে ফিরিয়ে দেওয়ার একতরফা সিদ্ধান্ত—যা পোল্যান্ডের অসন্তুষ্টি ডেকে আনে।
তবে ব্রাসেলসে অনেকেই খোলাখুলি স্বীকার করছেন, মের্ৎ-র পূর্বসূরি ওলাফ শোলৎজের বিদায়ে তারা স্বস্তিবোধ করছেন। ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির নেতৃত্বে ২০২১ থেকে ২০২৫—এই সময়টা অনেকের কাছেই ছিল হতাশাজনক।
'ওলাফ শোলৎজের নেতৃত্বে জার্মানির খ্যাতি খুব একটা ভালো ছিল না,' বলেন ব্রুগেল থিংক ট্যাংকের গুনত্রাম উল্ফ। 'শোলৎজ সব সময় ওয়াশিংটনকেই আগে ফোন করতেন। আমি মনে করি, এখন আশা করা হচ্ছে—ফ্রিডরিশ মের্ৎস ইউরোপের দিকে আরও মনোযোগী হবেন।'
ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালতোনেনও বলেন, 'আমাদের জার্মান সরকারের প্রতি খুব বেশি প্রত্যাশা আছে।'
- একজন ‘খাঁটি ইউরোপীয়’ নেতা -
চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মের্ৎ বলেন, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত ইউরোপীয় সংসদ সদস্য থাকার সময়টা তাঁর প্রিয় স্মৃতির অংশ। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন—নিজেকে তিনি গড়ে তুলবেন একজন 'খাঁটি ইউরোপীয়' নেতা হিসেবে।
শুক্রবার ইউরোপীয় কমিশনপ্রধান উরসুলা ফন ডের লায়েন, ইউরোপীয় কাউন্সিলপ্রধান আন্তোনিও কস্তা এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে একাধিক প্রেস কনফারেন্সে নিজের অগ্রাধিকার ব্যাখ্যা করবেন মের্ৎস।
তবে তার অগ্রাধিকার এরই মধ্যে স্পষ্ট: যুক্তরাষ্ট্রসহ নতুন বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব, ইউরোপীয় জলবায়ু নীতি ও শিল্পের মধ্যে ভারসাম্য, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ইউরোপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার।
ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান বিমুখতার প্রেক্ষিতে ইউরোপের পূনর্সসজ্জায় নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে জার্মানির ওপরই ভরসা করছে ব্রাসেলস।
মের্ৎসের এই সফরের সময় মস্কোয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় দিবস উপলক্ষে এক কুচকাওয়াজ আয়োজন করছেন ভ্লাদিমির পুতিন, যেখানে তার মিত্র দেশগুলোর নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। ইউরোপের পূর্ব প্রান্তে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকিই এই প্যারেডের পটভূমি হয়ে উঠেছে।
- ‘একই ভাষায় কথা বলেন’ -
মের্ৎ ও তাঁর সোশ্যাল ডেমোক্রেট (এসপিডি) জোট সঙ্গীরা ইতোমধ্যেই পরিবর্তন এনেছেন খরচে রক্ষণশীল জার্মানিতে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক ঋণ গ্রহণের পথ খুলে দিয়েছেন তারা।
এই প্রেক্ষিতে তিনি ব্রাসেলসের এমন উদ্যোগকে জোরালো সমর্থন দিয়েছেন, যাতে সদস্যরাষ্ট্রগুলো আরও শত শত বিলিয়ন ইউরো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে পারে—এমনকি তা ইইউর আর্থিক শৃঙ্খলাবিধি শিথিলের মাধ্যমে হলেও।
তবে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডের লায়েনের সঙ্গে মের্ৎসের বৈঠক। লায়েন নিজেও জার্মান রক্ষণশীল এবং মের্ৎসকে ‘বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন।
'তারা একই ভাষায় কথা বলেন,বলেন বিশ্লেষক উল্ফ। 'তারা একই রাজনৈতিক দল থেকে এসেছেন, অভিন্ন চিন্তা-ভাবনা রয়েছে, ইউরোপীয় একীকরণের সময়ে তাদের রাজনৈতিক বেড়ে ওঠা।'
এই দুজন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন বাণিজ্য নিয়ে—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে যেখানে জার্মানির রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
তবে এই বোঝাপড়ার মধ্যেও দ্বিমত থাকা অস্বাভাবিক নয়—বিশেষ করে অভিবাসন ইস্যুতে। ফন ডের লায়েন যেখানে পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে সমন্বিত পদক্ষেপ চান, মের্ৎস এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ের একতরফা পদক্ষেপেই বিশ্বাস রাখছেন।