বাসস
  ০৪ মে ২০২৫, ২১:০৬
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ২২:০৩

জার্মানিতে নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প র‌্যাভেনসব্রুকের মুক্তির ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন

ঢাকা, ৪ মে ২০২৫ (বাসস) : নাৎসিদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতা যেন ভুলে না যায় বিশ্ব- এ আহ্বান জানিয়ে হলোকস্ট থেকে বেঁচে ফেরা জীবিত ব্যক্তিরা রোববার উত্তর জার্মানিতে অবস্থিত র‌্যাভেনসব্রুক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প মুক্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

র‌্যাভেনসব্রুক থেকে এএফপি জানায়, ক্যাম্প থেকে বেঁচে ফেরা ৮০ ও ৯০ দশকের বয়সী ৯ জন নারী-পুরুষ, তাদের স্বজন এবং জার্মান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রায় ১২০০ জনের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ১১ বছর বয়সে ক্যাম্পে পাঠানো ফরাসি-ইহুদি নারী লিলি কেলর রোজেনবার্গ বলেন, তার বেঁচে যাওয়াকে তিনি এক ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং ‘নাৎসিদের বিরুদ্ধে বড় প্রতিশোধ’ বলে মনে করেন।

‘আমরা কখনো কল্পনাও করিনি যে এতদিন বাঁচব। ১৯৪৩ সালে আমাকে ক্যাম্পে পাঠানোর সময়ই আমার মৃত্যু অনিবার্য ছিল,’ বলেন ৯৩ বছর বয়সী রোজেনবার্গ। তিনি এক বছরের বেশি সময় র‌্যাভেনসব্রুকে কাটানোর পর বার্গেন-বেলসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে স্থানান্তরিত হন।

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে ও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বারবার বলেই যাবেন: ‘এই তরুণদের অবশ্যই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে, যা এক ভয়াবহ অভিশাপ, এবং ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে।’

বার্লিনের উত্তরে অবস্থিত র‌্যাভেনসব্রুক ছিল নারী ও শিশুদের জন্য নাৎসিদের সবচেয়ে বড় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। ক্যাম্পটিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আনুমানিক ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে পাঠানো হয়েছিল। পাশাপাশি একটি ছোট শাখা ক্যাম্পে পুরুষদেরও আটকে রাখা হতো।

এখানে ইহুদিদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধী, রোমা জনগোষ্ঠী এবং সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদেরও আটক রাখা হতো।

‘মানসিক ও শারীরিক ছাপ’

এই ক্যাম্পে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়। তাদের অনেকে অতিরিক্ত শ্রমে (প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ), গ্যাস চেম্বারে এবং যুদ্ধের শেষ দিকে মৃত্যুমিছিলের সময় প্রাণ হারান।

১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল সোভিয়েত লাল ফৌজ র‌্যাভেনসব্রুক মুক্ত করে, যেখানে মাত্র ৩ হাজার অসুস্থ বন্দিকে জীবিত পাওয়া যায়।

জার্মান নাগরিক ইনগেলোরে প্রকনো, যিনি র‌্যাভেনসব্রুকেই জন্মেছিলেন, রোববারের অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি ‘ভয়, ক্ষুধা কিংবা শীতের কোনো স্মৃতি মনে করতে পারেন না।’

তবুও তিনি বলেন, ‘আমার শরীর ও মনে এর গভীর ছাপ থেকে গেছে,’ তার এই বক্তব্যে উপস্থিত অতিথিরা করতালি দিয়ে সাড়া দেন।

এদিকে জার্মানিতে হলোকস্ট স্মৃতিরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, দেশটিতে সম্প্রতি চরম-ডানপন্থী এএফডি দলের প্রতি সমর্থন বেড়েছে এবং ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এক জাতীয় জরিপে তারা দ্বিতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে।

দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা গত সপ্তাহে এএফডিকে চরমপন্থি দল হিসেবে চিহ্নিত করে। দলের কয়েকজন নেতা দেশের স্মৃতিরক্ষার ঐতিহ্যের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন।

শনিবার হামবুর্গে নিউনগাম কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মুক্তি স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে স্বৈরাচারী, চরমপন্থী ও জনতাবাদীরা- আমাদের দেশসহ- এই শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ ইউরোপকে আঘাত ও ধ্বংস করতে চায়।

‘আমরা তাদের তা করতে দিতে পারি না।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও নাৎসি শাসনের পতনের ৮০ বছর পূর্তিতে এ বছর জার্মানি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নাজি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলো মুক্তির স্মরণ করছে।