বাসস
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:১৪

কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত সংঘাত অব্যাহত

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সীমান্তে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষ রোববার দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়লেও তা অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশ দু’টির মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছে বলে দাবি করলেও, থাইল্যান্ড তা অস্বীকার করেছে।খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

উপনিবেশিক আমলের সীমান্ত নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে শুরু হওয়া এই সংঘাতে দু’দেশের মধ্যকার প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি তথ্যমতে, প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে এই সংঘর্ষে পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

কম্বোডিয়ার সীমান্ত প্রদেশ বান্তেয় মিয়ানচের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ৬৩ বছর বয়সী শন লিপ এএফপিকে বলেন, ‘আমি এখানে ছয় দিন ধরে আছি। সীমান্ত এলাকায় এই লড়াই চলতে থাকায় আমরা খুব কষ্ট পাচ্ছি। আমি চাই এটি বন্ধ হোক।’ তিনি নিজের বাড়ি ও গবাদিপশু নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এখন পর্যন্ত ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী এই সীমান্ত সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন থাই সেনা। নিহতদের মধ্যে কম্বোডিয়ার ১১ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। উভয় পক্ষই সংঘর্ষ শুরুর জন্য একে অপরকে দায়ী করছে এবং আত্মরক্ষার জন্যই প্রতিরোধ যুদ্ধ করছে বলে দাবি করেছে।

শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, দুই দেশ যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়েছে। তবে, থাই নেতারা পরে জানান, উভয় দেশের মধ্যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি। রোববার সকালেও উভয় সরকার জানিয়েছে, সীমান্তে গোলাগুলি চলছে।

থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুরাসান্ত কংসিরি জানান, কম্বোডিয়া রাতভর সীমান্তবর্তী একাধিক প্রদেশে আমাদের ওপর গোলা ও বোমাবর্ষণ করেছে। 

অপরদিকে, ক্যাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা বলেন, মধ্যরাত থেকে থাইল্যান্ড সীমান্ত এলাকায় আমাদের লক্ষ্য করে মর্টার ও বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হওয়ায়, শনিবার কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে বহু অভিবাসী শ্রমিক আটকা পড়েছেন।

বান্তেয় মিয়ানচের একটি অস্থায়ী শিবিরে থাকা চেভ সোকুন জানান, তার স্বামী থাইল্যান্ডেই থেকে গেছেন এবং এখন এই যুদ্ধের কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি (স্বামী) ফিরতে পারছেন না। আমি তার জন্য খুব চিন্তায় আছি।’

অন্যদিকে থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশে ৩৮ বছর বয়সী সঙ্গীত শিক্ষক ওয়াত্থানাচাই কামংগাম জানান, রোববার ভোরে তিনি আকাশে রকেটের রেখা ও দূর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। সংঘাতের স্মৃতি ধরে রাখতে তিনি বাঙ্কারের দেয়ালে ট্যাংক ও সৈন্যদের ছবি আঁকছেন।

চলমান সংঘর্ষের কারণে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী সা কায়ো ও ত্রাত প্রদেশের কিছু এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে। জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় বিবদমান এই দেশ দুটির মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। 

তবে পরবর্তীতে সীমান্তে ল্যান্ডমাইনে থাই সেনা আহত হওয়ায় থাইল্যান্ড সেই চুক্তি স্থগিত করে। সাম্প্রতিক ফোনালাপ নিয়ে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল জানান, ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি। 

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত সংঘাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-থাইল্যান্ড বাণিজ্য আলোচনার সরাসরি কোনো যোগসূত্রও নেই। কিন্তু তিনি এও বলেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্যারান্টি দিয়েছেন যে থাইল্যান্ড ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো সুবিধা পাবে।’