বাসস
  ০৪ মে ২০২৫, ১৪:৪৩

তিক্ত স্বাদ ছড়াচ্ছে অস্ট্রিয়ার মোজার্ট চকলেট

ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস) :  ভিয়েনার একটি ছোট, অভিজাত কনফেকশনারিতে, শেফরা অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত উপহার সামগ্রী মোজার্ট চকলেট বলে শেষ স্পর্শ দিচ্ছেন—যা মারজিপান, পেস্তা, কাঠ বাদাম ও হ্যাজেলনাট নুগাট দিয়ে ভরা থাকে।

পারিবারিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘লেশচাঞ্জ’ এখনো হাতে তৈরি করে এই মোজার্টকুগেল চকলেট, যার মোড়কে থাকে অস্ট্রিয়ার অষ্টাদশ শতাব্দীর সঙ্গীতজ্ঞ উলফগ্যাং আমাদেউস মোজার্টের প্রতিকৃতি। তবে ‘লেশচাঞ্জ’ আজকাল ব্যতিক্রম। কারণ, ব্র্যান্ডের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে, এই জনপ্রিয় চকলেট বলগুলো এখন প্রায়ই অস্ট্রিয়াতেই তৈরি হচ্ছে না।

মার্কিন খাদ্য জায়ান্ট স্বীকৃত ব্র্যান্ডের মালিক মন্ডেলেজ গত মাসে ‘মোজার্টের জন্মস্থান’ অস্ট্রিয়ান শহর সালজবার্গ থেকে তাদের কারখানা পূর্ব ইউরোপে স্থানান্তরিত করেছে। যার ফলে পুরোনো ও উত্তপ্ত বিপণন বিতর্ক আবারও জেগে উঠেছে।

লেশচাঞ্জ-এর মালিক ৭৫ বছর বয়সী প্রধান চকোলেট প্রস্তুতকারক উলফগ্যাং লেশচাঞ্জ এএফপিকে বলেন "এটি লজ্জাজনক, কারণ মোজার্ট বল একটি অস্ট্রিয় পণ্য।"  তাঁর প্রতিষ্ঠানে একটিমাত্র মোজার্টকুগেল তৈরি করতে লাগে ১০টি ধাপ এবং বছরে প্রায় ২০,০০০টি অর্ডার অনুযায়ী হাতে তৈরি করা হয় এসব চকলেট।

একমাত্র 'অরিজিনাল': সালজবুর্গে ১৮৯০ সালে কনফেকশনার পল ফুয়ের্স্ট এই চকলেট বল উদ্ভাবন করেন। ১৯০৫ সালে প্যারিসে খাদ্য মেলায় স্বর্ণপদক জেতার পর এটি ইউরোপজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে তার প্রপৌত্র মার্টিন ফুয়ের্স্ট ব্যবসা পরিচালনা করেন, যারা এখনো সালজবুর্গে ঐতিহ্যবাহী রেসিপি মেনে বছরে প্রায় ৩৫ লাখ হাতে তৈরি মোজার্ট বল উৎপাদন করেন। এই চকলেট এখন পুরো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অনলাইনে অর্ডার করা যায়।

কিন্তু জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসেছে বহু অনুকরণ, ব্লুপ্রিন্টসহ রূপালী ফয়েলে মোড়ানো তাদের "আসল সালজবার্গার মোজার্টকুগেল" স্বীকৃতির জন্য ফুয়ের্স্ট পরিবারকে বছরের পর বছর ধরে লড়াই করতে হয়েছিল কারণ তাদের পূর্বপুরুষ প্রথমেই তার সৃষ্টি রক্ষা না করার ভুল করেছিলেন।

মোজার্ট চকলেট ইউরোপীয় ইউনিয়নের “সুরক্ষিত ভৌগোলিক নির্দেশক” (পিডিও) মর্যাদা পায়নি, যেমনটা শ্যাম্পেইন বা পারমিজান চিজ পায়।

এমনকি জার্মান হেভিওয়েট রেবার, যা সালজবার্গের সীমান্তের ঠিক ওপারে প্রতিদিন ৫ লাখ বল উৎপাদন করে, তারাও তাদের মোজার্ট বলকে খাঁটি  বলতে পারে। যদি তারা "আসল" শব্দটি ব্যবহার করতে না পারে। 

গত এপ্রিল মাসে এএফপির পক্ষ থেকে মন্ডেলেজ ইন্টারন্যাশনাল যা পূর্বে ক্রাফ্ট ফুডস নামে পরিচিত ছিল তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়েছিল "ইউরোপীয় নেটওয়ার্ক"-এর মধ্যে কোথায় নতুন চালু হওয়া "অথেন্টিক মিরাবেল মোজার্টকুগেলন" তৈরি শুরু করেছিল। এ বিষয়ে তারা তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
দশকের পর দশক তাদের চকলেট সালজবুর্গের একটি কারখানায় তৈরি হতো, যা দীর্ঘদিন লোকসানে চলার পর গত বছর বন্ধ হয়ে যায়। কোকোর উচ্চ দাম ও জ্বালানি খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করে মন্ডেলেজ বলেছে, তাদের মিরাবেল ব্র্যান্ড "একটি বাস্তব রত্ন" হলেও বাজারে টিকে থাকতে পণ্যের ওজন কিছুটা কমাতে হয়েছে।

মন্ডেলেজ-এর মোজার্ট বল বর্তমানে প্রায় ০.৫০ ডলারে বিক্রি হয়, যেখানে লেশানজের হাতে তৈরি একটি মিষ্টান্নের দাম এই পরিমাণের সাত গুণেরও বেশি।

সালজবার্গ প্ল্যান্ট বন্ধ হওয়ার পর ৬০ জনেরও বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রতিনিধিত্বকারী প্রো-জি ট্রেড ইউনিয়ন, মন্ডেলেজ-এর নতুন উৎপাদন স্থানের ব্যাপারে "স্বচ্ছতার অভাব" নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, একটি ডিমের সরবরাহ চেইনও এর চেয়ে ভালোভাবে ট্রেস করা যায়।

ভিয়েতনামী চকোলেট প্রস্তুতকারক হাইন্ডল অস্ট্রিয়ার প্রতীকী চকলেট "পূর্ব ইউরোপের কোথাও" উৎপাদিত হওয়ার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

৬৩ বছর বয়সী ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্দ্রেয়াস হেইনডল এএফপিকে বলেছেন, “মোজার্টকুগেল অস্ট্রিয়ার একটি প্রতীকী পণ্য, যেমন সাচারটর্ট চকোলেট কেক, অ্যাপল স্ট্রুডেল বা পোস্তদানা স্ট্রুডেল।” কেউ যখন অস্ট্রিয়ায় আসেন, তখন তারা অস্ট্রিয় পণ্য সাথে করে নিয়ে যেতে চান—বিশেষ করে মোজার্টকুগেল।  

তিনি জানান, কোকো তিনগুণ মূল্যবৃদ্ধিও সত্ত্বেও তিনি উৎপাদন বিদেশে স্থানান্তরের কথা ভাবেননি। 

লেসচাঞ্জ অস্ট্রিয়ার বাইরে উৎপাদিত মোজার্ট বলকে "মোজার্টের প্রতিকৃতি দিয়ে সজ্জিত স্যুভেনির কাপ" এর সাথে তুলনা করেছেন যা তাড়াহুড়ো করে কেনা হয়, পরে দেখা যায় এর নীচে "মেড ইন চায়না" লেখা আছে।