শিরোনাম

ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : দেশব্যাপী আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব’ দেশের তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করেছে বলে মনে করেন আর্চার সাগর ইসলাম।
তার মতে, তারুণ্যের উৎসব সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই উৎসবের মাধ্যমে বিপথে থাকা তরুণরা খেলাধুলায় প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে বিপথে যাবে না তরুণরা।
‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশের তারুণ্যের উৎসবের কর্মসূচি শুরু হয়।
তারুণ্যের উৎসব নিয়ে মেতে উঠে তরুণরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তরুণদের অংশগ্রহণে উদ্যাপিত হয়েছে তারুণ্যের উৎসব। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই উৎসব শেষ হবার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বছরব্যপী এই উৎসব চালিয়ে যাবার ঘোষনা দেয়।
এই উৎসবের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা ও অজানা সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে বিভিন্ন রকম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এমন আয়োজন বাংলাদেশের ও তরুণ সমাজের উপকার করেছে বলে জানান সাগর।
বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাগর বলেন, ‘এই তারুণ্যের উৎসব দেশের জন্য ভালো হয়েছে। কারণ বর্তমান প্রজন্ম মাদক-নেশায় আসক্ত এবং বিভিন্ন সমাজবিরোধী কাজের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। খেলাধুলার সাথে নাই, পড়াশুনার মধ্যেও নেই। প্রতিটা জেলায় গিয়ে গিয়ে এই আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে তরুণরা খেলাধুলায় ফিরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন আস্তে আস্তে নীচের দিকে যাচ্ছে, কারণ তরুণরা সঠিক পথে নেই। আবার সবাই খেলায় ফিরে আসছে। অনেকে আছে, তাদের মনের মধ্যে আবারও আগের মত খেলার প্রতি আগ্রহ ও ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে। তরুণরা খেলাধুলার প্রতি উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। আলহামদুলিল্লাহ, এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো হয়েছে।
এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’
খেলাধুলার প্রতি তরুণদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কারণে প্রতি বছরই তারুণ্যের উৎসব আয়োজন দেখতে চান সাগর। তিনি বলেন, ‘এটা যদি প্রতি বছর আয়োজন করা যেত, তাহলে আমাদের জন্যই ভালো হবে। কারণ একবারের আয়োজনে অনেকেরই মন পরিবর্তন করে খেলাধুলায় আনা যায় না। এভাবে যদি নিয়মিত আয়োজন করা হয়, তাহলে নেশাগ্রস্থদের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে আসবে এবং খেলোয়াড় সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে যাবে।’
তারুণ্যের উৎসবে আরচ্যারী আয়োজন চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে মনে করেন সাগর। তিনি বলেন, ‘আরচ্যারী আয়োজন অনেক বেশি ব্যয়বহুল ইভেন্ট ছিল। কারণ প্রতিটা জেলায় গিয়ে এটা আয়োজন করা হয়েছে। আমার কাছে এটি ভালো লাগছে। সব মিলিয়ে এটি সেরা আয়োজন ছিল।’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশীপে রিকার্ভ একক ও দলগত ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন সাগর।
এককে এলিমিনেশন রাউন্ডে ভিয়েতনামের কাছে ও দলগত ইভেন্টে শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়ান কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় সাগরদের।
২০২২ সালে প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতা ও একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে মেলে ধরেন সাগর।
বিকেএসপির হয়ে সে বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে প্রথম পদক জয় করেন, জাতীয় যুব আরচ্যারীতে দলগত ও মিশ্র ইভেন্টে স্বর্ণ পদক জয় করেন। ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে অংশ নিয়ে রিকার্ভ ইভেন্টে জয় করেন দলগত ব্রোঞ্জ। পরের বছর জাতীয় যুব গেমসে এককে স্বর্ণ, সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে বিকেএসপিকে স্বর্ণ উপহার দেন।
২০২৪ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে স্বর্ণ ধরে রাখেন। ইরাকে এশিয়া কাপে দলগত ও মিশ্র ইভেন্ট দুটি রূপা জয় করেন।
গত বছর বাংলাদেশের একমাত্র অ্যাথলেট হিসেবে প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি অংশ নেওয়ার সুযোগ পান সাগর। কিন্তু প্রথম রাউন্ডে সরাসরি সেটে হেরে পদক জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তার। তারপরও অলিম্পিকে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছেন সাগর।
১৮ বছর বয়সী সাগর বলেন, ‘প্যারিস অলিম্পিকে না পারলেও এখনও অলিম্পিকে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখি আমি। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য থাকবে, দল নিয়ে কোয়ালিফাই করা।
আমরা অলিম্পিক থেকে পদক আনতে চাই এবং নিজের সেরাটা দিয়ে খেলতে চাই। সব মিলিয়ে আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যাতে দল হিসেবে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারি। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য অলিম্পিক। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে ভালো কিছু করতে পারি।’
আর্চার হবার পেছনে মা’র অবদান অনেক বেশি বলে জানালেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির ছাত্র সাগর। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন ৩, তখন আমার বাবা মারা যায়। তখন থেকে আমার মা চা’য়ের দোকান দিয়ে অনেক কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন। সে পেছনে থেকে আড়ালে কেঁদেছে, সামনে এসে হেসেছে। এভাবেই আমাকে কখনও কষ্ট বুঝতে দেয়নি। আমাকে অনেক বেশি সাপোর্ট করছে মা। এটা সবার ভাগ্যে জুটে না, আলহামদুলিল্লাহ আমার ভাগ্যে ছিল। তাই সফলতা এখান থেকেই আসছে। যখন পরিবার থেকে পুরো সহযোগিতা থাকে, তখন কোন খেলোয়াড়কে কেউ আটকাতে পারে না। আসল হল পরিবার।’
এ বছর ক্রীড়া সংবাদিকদের প্রাচীণ সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশনের (বিএসপিএ) বর্ষসেরা আরচ্যার নির্বাচিত হন সাগর। প্রথমবারের মত বিএসপিএ ট্রফি জিততে পেরে রোমাঞ্চিত সাগর। তিনি বলেন, ‘এই অ্যাওয়ার্ড আসলেই অনেক বেশি আনন্দময় ছিল। আমি প্রথমবার এই অ্যাওয়ার্ডে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি দ্বিতীয়বার গিয়েই ট্রফি জিতেছি। এই ট্রফি আমাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলতে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করবে।’