বাসস
  ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৯

সংসারের ভার কাঁধে নিয়েও রূপার তীর ছুঁড়লেন বন্যা

ছবি : বাসস

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। কথাবার্তায় ভীষণ বিনয়ী। বন্যা আক্তারকে দেখে মনে হবে ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী ভুল করে চলে এসেছেন তীর ধনুক খেলতে। ঢাকায় চলমান এশিয়ান আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ কম্পাউন্ড মিশ্রদলগত ইভেন্টে রূপা জয়ে বড় অবদান ফরিদপুরের মেয়ে বন্যার।

অন্য আট দশটা সাধারণ পরিবারের মতোই বন্যার বেড়ে ওঠা। তিন বোন, এক ভাই ও বাবা মাকে নিয়ে পরিবার। যে পরিবারের মেজো মেয়ে বন্যাকে পুরো সংসারের দায়িত্বভার নিতে হয়েছে।

বাংলাদেশের রিকার্ভ আরচ্যাররা যেখানে ব্যর্থ সেখানে বন্যা কাঁধে তুলে নিয়েছেন দেশের পতাকা বইবার ভার। ঠিক একইভাবে বন্যা নিজের সংসারও টানছেন।

বন্যার বাবা শেখ খালেদ ২০২১ সালে ব্রেন স্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে শয্যাসায়ী। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বর্তমানে উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তি বন্যা। আগে বাংলাদেশ আনসারে চাকরি করলেও সম্প্রতি চুক্তিভিত্তিক হিসেবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে খেলছেন।

প্রায় ৯ বছরের আরচ্যারী ক্যারিয়ারে প্রথমবার এশিয়ান পদক মঞ্চে উঠেছেন বন্যা। এবং প্রথমবারই রূপা জিতেছেন। ইভেন্ট শেষে বলছিলেন,  “শুরুর দিকে চাপ ছিল। কারণ এমন বড় গেমে খেলছি। একটু নার্ভাস ছিলাম।”

দেশের কম্পাউন্ড অবহেলিত বলে আফসোস করে বলেন, “আমাদের ইভেন্ট সব সময় অবহেলিত। এটা কালও বলছিলাম যে আমরা অবহেলিত, এবার দেখিয়ে দিব। সেটা করতে পেরেছি। এটাই আমার সেরা রেজাল্ট।”

পরিবার থেকে সব সময় সমর্থন ছিল। তাই এত দূর আসতে পেরেছেন তিনি। পরিবারকে সহযোগিতা করতে পেরে গর্বিত বন্যা, “আমার খারাপ লাগে না। বরং মেয়ে হয়ে বাবাকে আর্থিক সাহায্য করি এতে আমার ভালো লাগে। আমি গর্বিত।”

২০২৮ সালে অলিম্পিকে কম্পাউন্ড মিশ্র ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বন্যার আশা বাংলাদেশ সরাসরি অলিম্পিক কোয়ালিফাই করবে, “আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন আমরা সরাসরি অলিম্পিকে খেলব।”

বন্যা আক্তারের গল্প শুধু একটি পদকজয়ের কাহিনি নয়, এটি এক লড়াকু নারী যোদ্ধার সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। সংসারের ভার, বাবার অসুস্থতা, পেশার অনিশ্চয়তা-সব কিছুর মাঝেও বন্যা দেখিয়েছেন দৃঢ়তা আর দেশের জন্য জয়ের তীব্র আকাঙ্খা। বন্যার এই সাফল্য নতুন প্রজন্মের নারী খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা জোগাবে, প্রমাণ করে দেবে-, স্বপ্ন বড় হলে বাধা যতই হোক, লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব।