শিরোনাম
ঢাকা, ১৭ মে ২০২৫ (বাসস) : টেবিল টেনিসে বর্তমানে দেশসেরা খেলোয়াড় হিসেবে সাদিয়া রহমান মৌ সকলের কাছে বেশ পরিচিত মুখ। ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় টেবিল টেনিস দলের অন্যতম সদস্য সাদিয়া দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যেতে চান অনন্য এক উচ্চতায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে টেবিল টেনিসের প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করারও ইচ্ছা পোষন করেছেন সাদিয়া।
২০০৪ সালে নড়াইলে জন্ম নেয়া সাদিয়ার টেবিল টেনিসের প্রতি প্রতিশ্রুতি ও কঠোর পরিশ্রম ইতোমধ্যেই সকলের নজড়ে এসেছে। মাত্র ৫ বছর বয়সে মায়ের অনুপ্রেরণায় তার টেবিল টেনিসে হাতেখড়ি।
বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞানে বিএসসি করছেন, যেখানে তিনি একাডেমিক জ্ঞানের সাথে স্বাস্থ্য ও খেলাধুলার সমন্বয় সাধন করছেন। পুষ্টি সচেতনা বৃদ্ধি ও খেলাধুলার উন্নয়নে সকলকে উদ্বুদ্ধ করার কাজটিও তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি করে যাচ্ছেন।
বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়ে স্বর্ণ জয়ের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন।
প্রশ্ন : টেবিলে টেনিসে আপনার উত্থানের গল্পটা আমরা জানতে চাই
সাদিয়া : সত্যি বলতে কি ছোটবেলায় আমি শুধুমাত্র খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতাম না, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সাংষ্কৃতির কর্মকান্ডেও জড়িত ছিলাম। আমার মা আমাকে টেবিল টেনিস খেলার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগান। কারন যখন আমার জন্ম হয় বাবা বেশ অসুস্থ ছিলেন। বাড়িতে যখন কেউ অসুস্থ থাকে তখন পুরো পরিবেশই ভিন্ন হয়ে যায়। বাবার অসুস্থতা দেখে আমি ও আমার বড় বোন সবসময়ই কষ্ট পেতাম। আমাদেও মন খারাপ থাকতো। এই হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমার মা টেবিল টেনিসের প্রতি আমাকে উদ্বুদ্ধ করে। সাথে সাথে অন্যান্য সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে তাকি। এভাবেই টেবিলে টেনিসের সাথে আমার সখ্যতা শুরু।
প্রশ্ন : জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ কিভাবে এলো?সাদিয়া : ২০১৫ সালে ১১ বছর বয়সে জাতীয় দলে প্রথমবারের মত ডাক পাই। ঐ সময় পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। ভারতে একটি নাচের প্রতিযোগিতায় আমার অংশ নেবার কথা ছিল। একটি গ্রুপের সাথে আমার কলকাতায় যাবার কথা ছিল। সে কারনে তাদের সাথে আমি প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। ঠিক ঐ সময় টেবিলে টেনিসে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। ঐ টুর্নামেন্টে ভাল খেলার কারনে জাতীয় দলে ডাক আসে।
প্রশ্ন : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপনার অর্জনগুলো সম্পর্কে বলুন
সাদিয়া : জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ গেমসে আমি তিনটি স্বর্ণ পদক পেয়েছি, যুব গেমসে পেয়েছি দুটি। সর্বশেষ জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং ঐ মুহূর্তে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করি। নয় বছর যাবত জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি। ২০১৬ সালে গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে দলীয় ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক পাই। ২০১৯ কাঠমান্ডু এসএ গেমসে নারী ডাবলসে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছিলাম। ২০২২ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে একমাত্র নারী খেলোয়াড় হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছি।
বাংলাদেশ থেকে আরো একজন নারী এ্যাথলেটের সাথে আমি কমনওয়েলথ গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করি। জুনিয়র সাউথ এশিয়ান গেমসেও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেছি।
প্রশ্ন : দেশের টেবিল টেনিসের বর্তমান অবস্থান নিয়ে কোন হতাশা আছে কিনা?
সাদিয়া : উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের সুযোগ সুবিধার সাথে তুলনা করলে আমি অবশ্যই হতাশ। কারন ২০১৬ সালে এসএ গেমসে অংশ নিয়ে আমি পাকিস্তান, নেপাল ভারতের টেবিল টেনিসের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জেনেছি। ঐ সময় সেই দেশগুলোর সাথে আমাদের বড় কোন পার্থক্য ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে ঐসব দেশগুলোর সাথে আমাদের পার্থক্য অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। যা আমাকে সত্যিই হতাশ করে। স্বাভাবিক ভাবেই এই বিষয়গুলো আমাদের পারফরমেন্সেও প্রভাব ফেলে। তবে অদূর ভবিষ্যতে ভাল কিছু হবে বলে আমি আশাবাদী। অবশ্যই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। টেবিল টেনিসকে একটি আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবার জন্য সকলেই দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছে।
প্রশ্ন : আপনার স্বপ্ন কি?
সাদিয়া : ব্যক্তিগত ভাবে কোন খেলোয়াড় যখন জাতীয় পর্যায়ে নিজেকে শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যায় তখন তার লক্ষ্য থাকে আন্তর্জাতিক ভাবে কিছু অর্জনের। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। অবশ্যই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের হয়ে ভাল কিছু করতে চাই। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বড় কোন অর্জন আমার আসেনি। সবসময়ই স্বপ্ন দেখি বিদেশের মাটিতে আমার জন্য জাতীয় সঙ্গীত বাজছে। এটাই আমার একমাত্র স্বপ্ন। আন্তর্জাতিক টুর্ণামেন্টে দেশের হয়ে স্বর্ণ উপহার দিতে চাই। এজন্য সকলের দোয়া চাইছি।