শিরোনাম

ঢাকা, ২২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অধীনে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা আগামী দশকে নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যেখানে শিল্প খাতের বৈচিত্র্য, উৎপাদন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারকে চীনে আরও বিস্তৃত করা অগ্রাধিকার পাবে।
চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি)-এর সভাপতি হান কুন বলেন, বিআরআই’র পরবর্তী ধাপ টেকসই কার্যক্রম, যৌথ অর্থায়ন এবং বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাবে। অর্থাৎ বিআরআই শুধু চীন-অর্থায়িত উদ্যোগ নয়, বরং এটি একটি যৌথ বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে হান বলেন, বিআরআই নিয়ে এখনও ভুল ধারণা রয়েছে, বিশেষ করে একটা ধারণা যে, সব বড় প্রকল্প চীন এককভাবে অর্থায়ন করে। তিনি বলেন, ‘এটি ভুল ধারণা। বিআরআই একটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কাঠামো। এটি একমুখী উদ্যোগ নয়, যেখানে শুধু চীন ব্যয় করে, বরং এটি পারস্পরিক সুবিধাভিত্তিক উদ্যোগ। যেখানে উভয় সরকার, বেসরকারি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা জড়িত।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১৪০টিরও বেশি দেশ এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়েছে, ফলে একক কোনো দেশের পক্ষে সব প্রকল্পে অর্থায়ন করা বাস্তবসম্মত নয়।
হান বলেন, ‘ বর্তমানে চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী হলেও সকল দেশের সব প্রকল্পে অর্থায়ন করা সম্ভব নয়। টেকসইতার জন্য বিনিয়োগ ভাগাভাগি হতে হবে, সুবিধা ভাগাভাগি হতে হবে এবং প্রকল্প নির্বাচন বাস্তবসম্মত হতে হবে।’
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সালে বিআরআই-এ যোগ দেয়। এরপর থেকে সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, টানেল এবং সড়ক অবকাঠামোসহ বড় প্রকল্পগুলো বিভিন্ন ধরনের চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রেয়াতমূলক ঋণ, বাণিজ্যিক ঋণ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ।
হান কুন বলেন, ‘সহযোগিতা শুধু নির্মাণ ও চুক্তিভিত্তিক কাজে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এতে শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও ব্যবসায়িক মডেলও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। চীনের অর্থনীতিতে সাংস্কৃতিক শিল্প -যেমন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ, মিডিয়া বিনিময় ইতোমধ্যেই বড় ভূমিকা পালন করছে। এগুলো বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারে।’
হান বলেন, ‘ চীনের নতুন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলে এবং উভয় পক্ষ কার্যকরভাবে সহযোগিতা করলে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। সিইএবি’র ভূমিকা হলো দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে সংযোগ তৈরি করা এবং আরও বহুমাত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।’
আগামী দশকের বাংলাদেশ-চীন বিআরআই সহযোগিতায় শিল্প বৈচিত্র্য, উৎপাদন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকা সীমিত হলেও সাম্প্রতিক অগ্রগতির ফলে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে-যেমন চীনের বাজারে বাংলাদেশের আম প্রবেশের অনুমোদন।
তিনি বলেন, ‘আগামী বছর কাঁঠালসহ আরও কিছু পণ্য অনুমোদন পেতে পারে। তবে আমাদের আরও রপ্তানিযোগ্য পণ্য চিহ্নিত করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল এবং পানি-সম্পদ-ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থার মতো অবকাঠামো সহযোগিতা ধীরে ধীরে আরও আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হবে।
বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিআরআই সহযোগিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করে হান বলেন, প্ল্যাটফর্মটি ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুফল দিয়েছে এবং উভয় দেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরও বিকশিত হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীন বিআরআই সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত হতে থাকবে এবং আরও কার্যকর হবে। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় খাতের উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে।’
বিআরআই-এর পরবর্তী ধাপকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,‘বিআরআই কেবল চীন অন্যদের সহায়তা করছে তা-নয়, এটি যৌথ ও টেকসই উন্নয়ন গড়ে তোলার কাঠামো, যেখানে উভয় দেশই উপকৃত হয়।’
সরকারি পর্যায়ের (জি-টু-জি) প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, দুই দেশের অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় বড় প্রকল্পগুলোতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। তিনি বলেন, ‘একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাংলাদেশে অনুমোদন পায়, এরপর তা চীনে যায়; চীন থেকে ফিরে আবার বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরের অনুমোদন নিতে হয়। এ কারণে জি-টু-জি প্রকল্পের সময় দ্বিগুণ হয়ে যায়।’
তিনি প্রস্তাব দেন, সময়সীমা বদ্ধ কাজের প্রক্রিয়া বা সেবা আবেদনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা উচিত। এতে দক্ষতা দ্বিগুণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।