শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ ও বায়ুমান উন্নয়নে ৬৪০ মিলিয়ন ডলারের দুটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ।
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুর মানোন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি ও নগরে বায়ুদূষণের মূল কারণসমূহ চিহ্নিত করে তা নিরসনের মাধ্যমে এই দুটি প্রকল্প অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে, উৎপাদনশীলতা বাড়াবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।
‘জ্বালানি খাত নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস কোম্পানি পেট্রোবাংলার জন্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- ব্যয় সাশ্রয়ী অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করে গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি আইডিএ গ্যারান্টি ব্যবহার করে আগামী সাত বছরে নতুন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য ২১০ কোটি ডলার পর্যন্ত বেসরকারি মূলধন সংগ্রহ করা হবে। এই আইডিএ গ্যারান্টি পেট্রোবাংলার ঋণ যোগ্যতা বাড়াবে, যা তাদের এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশের মোট প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের মধ্যে এক-চতুর্থাংশের বেশি বিদেশ থেকে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) দ্বারা পূরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানিতে অর্থ প্রদানের নিরাপত্তা ও কার্যকরী মূলধনের সমাধান হবে। যার ফলে ব্যয়বহুল স্পট মার্কেট নির্ভরতা কমবে।
প্রকল্পটির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং এই প্রোগ্রামের টাস্ক টিম লিডার ওলাইঙ্কা বিসিরিয়ু ইডেবিরি বলেন, এই প্রকল্পটি বাংলাদেশকে সাশ্রয়ী উপায়ে গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তা বাড়াতে সাহায্য করবে, যা শিল্প ও গার্হস্থ্য খাতে ব্যবহারকারীদের জন্য নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী বিদ্যুতে অবদান রাখবে। নির্ভরযোগ্য গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রকল্পটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প’ এর আওতায় বায়ুদূষণ মোকাবিলা ২৯০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাংলাদেশে মারাত্মক বায়ু দূষণ মোকাবিলায় একটি বড় পদক্ষেপ হবে।
ঢাকা বিশ্বের অন্যতম বায়ুদূষণপ্রবণ শহর, যেখানে সূক্ষ্ম কণার (পিএম ২.৫) বার্ষিক ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের ১৮ গুণ বেশি।
এই প্রকল্প পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু গুণমান পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করবে, নতুন ও উন্নত মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করবে।
এছাড়া এটি বায়ু দূষণের প্রধান শিল্প উৎসগুলোর রিয়েল টাইম পর্যবেক্ষণের জন্য কন্টিনিউয়াস এমিশনস মনিটরিং প্রোগ্রাম চালু করতেও সহায়তা করবে। স্বয়ংক্রিয় পর্যবেক্ষণ সিস্টেমের একটি সমন্বিত নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে, এই পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রামটি নির্গমনের সীমা প্রয়োগ এবং প্রধান উৎসগুলো থেকে সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্য প্রকাশের অনুমতি দেবে।
প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ উন্নত করা এবং পুরাতন ও দূষণকারী ডিজেল বাসের পরিবর্তে ৪০০টি শূন্য-নির্গমন বৈদ্যুতিক বাসের একটি বহর চালু করা। এই বৈদ্যুতিক বাসগুলো উন্নত পরিষেবা মানের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে একক অপারেটর মডেলের অধীনে পরিচালিত হবে। প্রকল্পটি বৈদ্যুতিক বাসগুলোর চার্জিং, পার্কিং ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট ডিপো স্থাপন করবে।
এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। দুটি অকেজো কেন্দ্রকে আপগ্রেড এবং মোবাইল যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র ও ২০টি মোবাইল যানবাহন নির্গমন পরীক্ষা ইউনিট চালু করা হবে। পরিবহন খাতে এই সম্মিলিত পদক্ষেপগুলো বার্ষিক প্রায় ২ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন পিএম২.৫ নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং এই প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার আনা লুইসা গোমস লিমা বলেন, এটি দেশের বায়ু মানের উন্নতির জন্য নতুন এক ধারার সূচনা করবে। যেহেতু বায়ু সীমানা অতিক্রম করে, তাই কোনো একক দেশ একা বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এই প্রকল্পটি বায়ু দূষণ কমাতে আঞ্চলিক সংলাপ এবং তথ্য আদান-প্রদান সহজ করবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। তখন থেকে সংস্থাটি বাংলাদেশে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইডিএ’র সহায়তায় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের অন্যতম বৃহৎ অর্থপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে অবস্থান করছে।