বাসস
  ১৭ মে ২০২৫, ১৮:৪১

মার্কিন শুল্ক ইস্যু মোকাবিলায় কূটনৈতিক ও কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

ডিসিসিআই এবং বিল্ড যৌথভাবে আয়োজিত ‘যুক্তরাষ্ট্রের পারষ্পরিক শুল্ক এবং বাংলাদেশের কর্ম-পরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বক্তব্য দেন। ছবি: বাসস

ঢাকা, ১৭মে, ২০২৫ (বাসস) : দেশের রফতানি খাতের সুরক্ষা ও টেকসই করার লক্ষ্যে মার্কিন শুল্ক ইস্যু মোকাবিলায় রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ অতীব জরুরি মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। 

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিশীলতার পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তিনি উল্লেখ করেন, নিজেদের অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণ, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে ত্বরান্বিত করা, কার্যকর ও কৌশলগত অর্থনৈতিক কূটনীতির জোরারোপ, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার উন্নতি ও মানব সম্পদের দক্ষতার বিকাশে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে আয়োজিত ‘যুক্তরাষ্ট্রের পারষ্পরিক শুল্ক এবং বাংলাদেশের কর্ম-পরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হতে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমরা আগ্রহী এবং এ লক্ষ্যে দ্বি-পাক্ষিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র  থেকে তুলা আমদানিতে বাংলাদেশে ওয়ারহাউস স্থাপনের কথা ইতোমধ্যে বলা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যকার ১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বাড়বে। তৃতীয় দেশ হতে যুক্তরাষ্ট্র পণ্য আমদানির বিষয়টি প্রথম আলোচনা পর্বে উপস্থাপন করা হবে, যেন তারা এটাকে সরাসরি বাণিজ্য হিসেবে গণ্য করে। 

মূল প্রবন্ধে সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন, এ পরিস্থিতিকে অনেকেই দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করছেন, তবে আমাদের এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আরোপিত পারষ্পরিক শুল্কের প্রভাব মূলত পড়বে ভোক্তার উপর এবং বৈশ্বিক বাজার সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করবে না। এটি কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।

এছাড়াও বিষয়টি কেবলমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং অনেকাংশেই ভূ-রাজনৈতিক বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন। 

এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে সেবা খাতকে প্রাধান্য না দিয়ে পণ্য বাণিজ্যকে বেশি হারে গুরুত্ব দিয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের নেগোশিয়েশনের ক্ষেত্রে সেবা খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালানো প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

বিল্ড চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবতা যাচাই, রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণে পর্যাপ্ত নীতি সহায়তা নিশ্চিতকরণ, নতুন বাজার সম্প্রসারণে রোডম্যাপ প্রণয়ন, আসিয়ানের সদস্যভূক্তির জন্য বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণে সরকারি সহায়তার দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দান এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার ব্যয় হ্রাসের সক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন।

আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদেরকে সঠিক পদ্ধতিতে কার্যকরভাবে নেগোশিয়েশন চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পারষ্পরিক শুল্ক আরোপ করেছে তা কাম্য নয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের সম্পর্ক আরো জোরালো হতে হবে। 

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেসবাউল হক, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ও শাশা ডেনিমস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাশরুর রিয়াজ এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক ইঞ্জি. রাজিব হায়দার অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেসবাউল হক বলেন, বাজারে টাকার সরবরাহ বেশ ভালো। তবে শিল্পখাতের আর্থিক চাহিদা মেটাতে ব্যাংকখাতের উপর বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থার উপর চাপ প্রতিনিয়িত বাড়ছে। আর্থিক খাতের বাজারে কাঠামোগত দক্ষতা বাড়ানো না গেলে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কি চায় এবং তাদের ভূ-অর্থনৈতিক প্রাধিকার কি সেটা আমাদের আগে জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তুলা, সয়াবিন, এলএনজি-এ তিনটি পণ্যের আমদানি বাংলাদেশে ক্রমাগত বাড়ছে, তাই এ ধরনের সম্ভাবনাময় পণ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, প্রাক্তন সভাপতি আফতাব-উল ইসলাম, ওসামা তাসীর এবং ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তারসহ সরকারি-বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।