শিরোনাম
ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার আরেকটি বড় ধাক্কা লাগলো শুক্রবার, যখন ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিজ দেশটির শেষ অবশিষ্ট ট্রিপল-এ (এএএ) রেটিং এএ১-এ নামিয়ে আনে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ ও সুদের বোঝা এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ বলে জানায় সংস্থাটি।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, এই রেটিং হ্রাস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক শক্তি ও সমৃদ্ধির বয়ানের ওপর একটি বড় আঘাত। একই দিনে কংগ্রেসে তার অন্যতম প্রধান ব্যয় পরিকল্পনা বিল ভোটাভুটিতে পাস হতে ব্যর্থ হয়। রিপাবলিকান দলের কয়েকজন কট্টর আর্থিক রক্ষণশীলের বিরোধিতায় এটি আটকে যায়।
মুডিজ ব্যাখ্যা করে বলেছে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ও সুদ পরিশোধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা একই রেটিংধারী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ মার্কিন বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যেখানে ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৬.৪ শতাংশ। এই ঘাটতির মূল কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে ঋণের ওপর সুদের ব্যয় বৃদ্ধি, ‘এনটাইটেলমেন্ট’ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও তুলনামূলকভাবে কম রাজস্ব আয়।
ফলে ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মোট সরকারি ঋণ জিডিপির ১৩৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মুডিজ, যেখানে ২০২৪ সালে এ হার ছিল ৯৮ শতাংশ।
হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়া
রেটিং কমার ঘটনায় হোয়াইট হাউজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়। হোয়াইট হাউজের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চিউং মুডিজ অ্যানালিটিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি-কে সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, 'তার ‘বিশ্লেষণ’ কেউ গুরুত্ব সহকারে নেয় না। বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছেন তিনি।'
‘আর্থিক শৃঙ্খলা নেই’
মার্কিন অর্থনীতির এই রেটিং হ্রাস পূর্বেও ঘটেছিল। ২০১১ সালে বারাক ওবামার শাসনামলে এসঅ্যান্ডপি যুক্তরাষ্ট্রের রেটিং হ্রাস করে, এরপর ২০২৩ সালে ফিচ একই পদক্ষেপ নেয়। এবার মুডিজ-ও তাদের অনুসরণ করলো।
মুডিজ বলেছে, ধারাবাহিকভাবে মার্কিন প্রশাসন ও কংগ্রেস বড় বাজেট ঘাটতি ও সুদব্যয় মোকাবেলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমান বাজেট প্রস্তাব থেকে বহু বছরের স্থায়ী ব্যয় হ্রাস বা ঘাটতি কমবে—এমন আশারও কোনো ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করে সংস্থাটি।
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ফ্রেঞ্চ হিল বলেন, “মুডিজের সিদ্ধান্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের দেশের আর্থিক ঘর এখনও গোছানো হয়নি।”
তিনি বলেন, হাউস রিপাবলিকানরা আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে, ঋণের মূল কাঠামোগত কারণসমূহ দূর করতে এবং প্রবৃদ্ধিমুখী অর্থনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ব্যয় বিলের ভবিষ্যৎ
এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এলো, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বহুল প্রচারিত ‘বড় ও সুন্দর’ ব্যয় পরিকল্পনা বিল কংগ্রেসে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছে। বিলটির লক্ষ্য ছিল ২০১৭ সালের কর ছাড় প্রকল্পের প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্প্রসারণ। এটি মেডিকেইড স্বাস্থ্যবীমা খাতে ব্যাপক কাটছাঁট করে অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা করছিল, যা বর্তমানে ৭ কোটির বেশি কম-আয়ের মার্কিন নাগরিককে সেবা দেয়।
তবে কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেছে মুডিজ। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বের বৃহৎ, স্থিতিস্থাপক ও উদ্যমী অর্থনীতি, এবং বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের অবস্থানের মতো কিছু ‘ব্যতিক্রমী আর্থিক শক্তি’ ধরে রেখেছে।
সংস্থাটি তাদের আগের ‘নেগেটিভ’ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এখন ‘স্টেবল’ করেছে।