শিরোনাম
ঢাকা, ৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬৫ শতাংশ মুনাফা কমেছে মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ডের। এছাড়া নতুন যানবাহন বাজারে আনায় স্বল্পমেয়াদে গাড়ি বিক্রিতে চাপ পড়ার পাশাপাশি শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৫ সালের জন্য করা পূর্বাভাস প্রত্যাহার করে নিয়েছে ফোর্ড। সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অসংখ্য শুল্ক পদক্ষেপের কারণে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি পুরো বছরে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
যদিও ফোর্ড তাদের সরবরাহ চেইনে কিছু পরিবর্তন এনেছে যাতে শুল্কের প্রভাব কমানো যায়।
আমদানিকৃত যানবাহন, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও যন্ত্রাংশের উপর আরোপিত শুল্কের কারণে তারা ধারণা করেছিল যে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে তাদের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই খাতে তারা ১ বিলিয়ন ডলার হ্রাস করতে পেরেছে।
ফোর্ডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) শেরি হাউস সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুল্কের প্রভাব কমানোর জন্য আমাদের দল যথেষ্ট কাজ করেছে।’ প্রথম প্রান্তিকে ফোর্ডের মুনাফা ছিল ৪৭১ মিলিয়ন ডলার, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে, কিন্তু ২০২৪ সালের তুলনায় তা ছিল মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। যেখানে রাজস্ব ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.৭ বিলিয়ন ডলার।
প্রথম প্রান্তিকে, ফোর্ডের হোলসেল ইউনিট বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই পতনের পূর্বাভাস ফোর্ড আগেই দিয়েছিল, কেননা কেনটাকি ও মিশিগানে যেসব কারখানায় নতুন যানবাহন উৎপাদন শুরু হয়েছে, সেগুলোর উৎপাদনের গতি কম ছিল। মার্চ মাসে তারা নতুন ফোর্ড এক্সপেডিশন ও লিংকন ন্যাভিগেটর ক্রেতাদের কাছে পাঠানো শুরু করে।
ফোর্ডের ‘প্রো’ ডিভিশন যা মুলত ব্যবসায়িক ক্রেতাদের জন্য বণিজ্যিক যানবাহন যেমন পিকআপ ভ্যান তৈরি করে এবং "ব্লু" ডিভিশন যা প্রচলিত পেট্রোলচালিত উভয় গাড়ির জন্য মুনাফা হ্রাস পেয়েছে। সেই সাথে তাদের ইলেকট্রিক গাড়ি ডিভিশনের ক্ষতি কিছুটা কমেছে।
ফোর্ড জানায়, শুল্ক বাদ দিলে তাদের ব্যবসা ‘শক্তিশালী’। তারা আগে সমন্বিত পরিচালন মুনাফা ৭ থেকে ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হবে বলে যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তা ঠিকই ছিল।
তিনি আরও বলেন, তারা শুল্ক এড়াতে মেক্সিকো থেকে কানাডায় গাড়ি পাঠানো এবং যুক্তরাষ্ট্রে শুধু ট্রানজিট হওয়া যন্ত্রাংশে শুল্ক না বসানোসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অটো যন্ত্রাংশের উপর শুল্ক কমানোর কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেন, যাতে কোম্পানিগুলো সরবরাহ চেইন স্থানান্তরের জন্য দুই বছর সময় পায়।
যদিও হোয়াইট হাউস ২৫ শতাংশ পুর্ণাঙ্গ তৈরি গাড়ির উপর শুল্কের চাপ কমানোর জন্য এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে হায়াইট হাউস বলেছে, বিদেশি কারখানায় সংযোজিত যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত যন্ত্রাংশ থেকে ফোর্ড কিছুটা ক্ষতিপূরণ বা ভারসাম্য পাওয়ার প্রত্যাশা করছে।
সরবরাহ চেইনে অনিশ্চয়তার অশঙ্কা: ফোর্ডের প্রধান নির্বাহী জিম ফারলি বলেন, ফোর্ড গ্রাহকদের আকর্ষণে ‘খুবই আক্রমণাত্মক’ অবস্থানে থাকবে। কোম্পানিটি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা কর্মচারীদের জন্য বিক্রয় প্রণোদনা এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যার ফলে গাড়ি বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৫ সালের শেষার্ধে শুল্কের প্রভাবে গাড়ির দাম বাড়তে পারে, যা বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ফোর্ডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) শেরি হাউস আশা করছেন, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা বিক্রয় সংকোচন হতে পারে এবং পুরো বছরের বিক্রয় হয় স্থির থাকবে অথবা প্রায় এক শতাংশ বাড়তে পারে।
ফোর্ড বলেছে, তারা শুল্কসহ বিভিন্ন অনিশ্চয়তার কারণে তাদের ২০২৫ সালের দিকনির্দেশনা স্থগিত করছে। শুল্ক ছাড়াও সম্ভাব্য পাল্টা-শুল্ক, সরবরাহ চেইন বিঘ্ন, এবং ওয়াশিংটনে নির্গমন নীতির পরিবর্তন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ স্বল্পমেয়াদি ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা।
ফোর্ডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা কুমার গালহোত্রা জানান, কোম্পানিটি বিরল অর্থ উপাদানের উপর চীনের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছে, যা গাড়ির সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটানো এবং প্রতিযোগিতার দামের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। আফটার-আওয়ার্স ট্রেডিংয়ে ফোর্ডের শেয়ার মূল্য ২.৩ শতাংশ কমে গেছে।