শিরোনাম
/ মনসুর আহম্মেদ /
রাঙামাটি, ২০ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : ছয় দশক ধরে অবিচল দাঁড়িয়ে আছে কাপ্তাইয়ের পিলার বিহীন মসজিদ। কর্ণফুলি পেপার মিলস কর্তৃপক্ষের নির্মিত এই মসজিদটি কর্ণফুলি পেপার মিলস বড় মসজিদ নামেও পরিচিত। পাহাড়ের সবুজ মনোরম শীতল পরিবেশে ১৩ হাজার বর্গফুটের এই মসজিদটি স্থানীয় মুসল্লিদের যেমন প্রিয়, তেমনি এর বিশেষত্ব নজর কেড়েছে দেশি বিদেশি পর্যটকদেরও।
স্তম্ভ বা পিলার ছাড়া কোনো ভবন নির্মাণের কথা কেউ কল্পনা না করলেও, রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ৫৯ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ পিলারবিহীন এই মসজিদটি। পাহাড়ি সবুজ বনবনানীর মাঝখানে অবস্থিত অপরূপ সুন্দর এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। কাপ্তাই বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দেখতে এখানে চলে আসেন।
১৯৬৬ সালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক এনে কর্ণফুলি পেপার মিল্স (কেপিএম)-এর শ্রমিকদের জন্য মসজিদটি নির্মাণ করেন দাউদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আহমেদ দাউদ এইচ কে। ১৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের মসজিদটিতে চার থেকে সাড়ে চার হাজার মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে দৃষ্টিনন্দন বাতি রয়েছে প্রায় ৩৮টি। এছাড়া মসজিদের তিন পাশে রয়েছে ২৩টি জানালা ও ৯টি দরজা। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, স্তম্ভ না থাকায় মসজিদে মুসল্লিরা যেখানেই দাঁড়ান না কেন প্রত্যেকেই খতিব কিংবা ইমামকে দেখতে পান।
রাঙামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলি পেপার মিলস আবাসিক এলাকায় অবস্থিত পিলার বিহীন এই মসজিদটি এলাকায় বড় মসজিদ নামেও পরিচিত। মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন সুনিপুণ কারুকার্য খচিত মসজিদটি সকলের নজর কাড়ে। প্রচণ্ড গরমেও চারদিকের সবুজ ছায়ায় মসজিদের ভেতরটা সবসময় শীতল থাকে।
কর্ণফুলি পেপার মিল্স বড় মসজিদের ইমাম এটি এম আব্দুল্লাহ বাসসকে বলেন, আমি দীর্ঘ ৫০ বছর এই মসজিদের সাথে যুক্ত আছি। এই মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বিশাল এই মসজিদে কোনো পিলার নেই এবং এরকম মসজিদ দেশের অন্য কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই। মসজিদ নির্মাণের পর থেকে কাপ্তাই কেপিএম কর্তৃপক্ষ এই মসজিদের দেখাশুনা করলেও, বিভিন্ন সমস্যার কারণে কেপিএম কর্তৃপক্ষ এখন মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে মসজিদের সংস্কার খুবই প্রয়োজন। এলাকার সচ্ছল ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে মসজিদের সংস্কারে সহযোগিতা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এত বড় মসজিদের সংস্কারে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্থানীয় প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ নির্মাণে ব্যবহৃত মার্বেল ও টাইলস করাচী থেকে আনা হয়েছিল। কর্ণফুলি পেপার মিল্স একসময় খুবই জমজমাট ছিল। সেসময় শ্রমিকও অনেক ছিল। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে পেপার মিলের নানাবিধ সমস্যার কারণে এখানে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। মসজিদটিতে মুসল্লির সংখ্যাও অনেক কমে গেছে।
কাপ্তাই উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবির হোসেন বাসসকে বলেন, কাপ্তাই কর্ণফুলি পেপার মিল্স আবাসিক এলাকায় অবস্থিত পিলার বিহীন এই বড় মসজিদ শুধু রাঙামাটি না, এটি বাংলাদেশের জন্য ঐতিহ্যবাহী একটি পুরোনো মসজিদ। সঠিক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে মসজিদের অবস্থা খুবই নাজুক।
তিনি বলেন, মুসলিম নিদর্শনের ঐতিহ্য বহন করলেও বর্তমানে সংস্কারের অভাবে মসজিদটির বেহাল দশা। খসে পড়ছে সিলিং। সামান্য বৃষ্টিতেই মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে মসজিদে। এছাড়া খসে পড়ছে মসজিদের দেয়ালের আস্তর এবং অর্থাভাবে সংস্কার করাও যাচ্ছে না। দেশের ঐতিহ্যবাহী পুরোনো এই মসজিদের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
গণপূর্ত উপ-বিভাগের রাঙামাটি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জয় বড়ুয়া বাসসকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে পিলার বিহীন এই মসজিদটি অনেক পুরোনো একটি মসজিদ। এই মসজিদের চারপাশে পিলার থাকলেও মসজিদের ভেতরের বিশাল অংশজুড়ে কোন পিলার নেই।
তিনি বলেন, আপাত দৃষ্টিতে এটি অসম্ভব মনে হলেও এটাই সত্য। মসজিদটি লোড বেয়ারিং ওয়াল ও ইনভার্টেড বীম দ্বারা নির্মাণ করায় ভবনটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। এ পদ্ধতিতে খুব উন্নতমানের নির্মাণকৌশল ব্যবহার করে ভেতরের অংশে বিম পিলার ছাড়াও ভবন নির্মাণ করা যায়। এই মসজিদটি তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মসজিদটির সংস্কার করা হলে এটি আরো অনেক বছর টিকে থাকবে।
রাঙামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলি পেপার মিলস-এর ঐতিহ্যবাহী স্তম্ভবিহীন এই মসজিদটির মৌলিকতা ধরে রেখে সংস্কার ও মসজিদটিকে প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।