বাসস
  ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৩:২৪

পিরোজপুরের শত বছরের পুরনো ভাসমান নৌকার হাটে সম্ভাবনার ঢেউ

পিরোজপুরে শত বছরের পুরনো ভাসমান নৌকার হাট । ছবি :বাসস

//মো.মিজানুর রহমান //

পিরোজপুর, ২৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানার শত বছরের পুরনো ভাসমান নৌকার হাটে (বাজার) সম্ভাবনার ঢেউ লেগেছে। এ হাটকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উনয়নের এক অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভাসমান এ নৌকার হাট দেখতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা যেমনি ভিড় করছেন। তেমনি প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে দেশি-বিদেশি ক্রেতার সংখ্যা।

সম্প্রতি এ হাট পরিদর্শন করে গেছেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত ড.আব্দেল ওয়াহাব সাইদানি। তিনি তার দেশের জন্য এখানকার নৌকা ক্রয় করে নিয়ে যেতে চান, পাশাপাশি এ শিল্পে আলজেরিয়ার পক্ষ থেকে বিনিয়োগের আগ্রহও প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া কিছুদিন পূর্বে জার্মানির এক নাগরিক এ হাট দেখতে এসে ১০ টি নৌকা ক্রয় করেছেন এবং আরো ২০ টি নৌকার অর্ডার দিয়ে গেছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এখানকার নৌকা সারা বাংলাদেশের বন্যা কবলিত এলাকার জন্য কাজে লাগাতে চান। খুব শীঘ্রই এ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের এখানে আসার কথা রয়েছে।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে চোখ জুড়ানো এ ভাসমান নৌকার হাট বসে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানায়। এ অঞ্চলের ১০ টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এ নৌকা ব্যবসার সাথে জড়িত।

মৌসুমের তিন-চার মাস ধরে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাটটি জমজমাট হয়ে ওঠে। এ হাটে বিক্রেতারা যেমন খুশি নৌকা বিক্রি করে, তেমনি ক্রেতারা ও খুশি নৌকা কিনে। ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে কেনাবেচার এক ধুম লেগে যায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত।

সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার ভাসমান এ নৌকার হাট বসে। পিরোজপুরের পার্শ্ববর্তী জেলা ঝালকাঠি, বরিশাল, বরগুনা, গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসেন এখানকার নৌকা কেনার জন্য। এখানকার নৌকা কাঠের মান ও আকার ভেদে ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। প্রতি হাটে তিন থেকে চার শতাধিক নৌকা বিক্রি হয় এ হাটে। 

এছাড়া ক্রেতাদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রন্ত থেকে পর্যটকদের আগমনও ঘটে এখানে। বর্তমানে বিদেশি পর্যটকদের আগমন ও ঘটছে ভাসমান এ নৌকার হাটে। এ নৌকার হাটের পাশেই ২০০ বছর পুরনো আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান থাকায় পর্যটকরা বাড়তি বিনোদন উপভোগ করেন।

সকালে সূর্য উদয়ের সাথে সাথে হাটের দিনে দেখা যায়, শাপলা ফুলের মত ফুটে আছে সারি সারি নৌকা। আটঘর খাল থেকে ট্রলার কিংবা ইঞ্জিন চালিত কোন নৌকা ভাসমান হাটের গা ঘেঁষে যাওয়ার পরে সূর্যমুখী ফুলের মত দুলতে থাকে নৌকাগুলি। সে এক অপরূপ দৃশ্য।

এ হাটের ইজারাদার আবুল বাশার বলেন, ভাসমান নৌকার হাট শত বছরের পুরনো। এখানে মানুষ শুধু নৌকা কিনতেই আসেন না দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ও এখানে ঘুরতে আসছেন। প্রতিহাটে ৩০০ থেকে ৪০০ নৌকা বিক্রি হয়। প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হয় ঐতিহ্যবাহী এ ভাসমান নৌকার হাটে। তবে বিদেশীদের আগ্রহ বাড়ায় এ বিক্রির পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

তবে এ হাট নিয়ে এখানকার ব্যবসায়ীদের কিছু অভিযোগও আছে। তারা বলেন, এ হাটে নেই কোন ক্রেতা, বিক্রেতা ও পর্যটকদের বসার স্থান। তাদের দাবি প্রশাসনের উদ্যোগে যদি ক্রেতা বিক্রেতা ও পর্যটকদের বসার জন্য জায়গা তৈরি করে দেয়া যায়, তাহলে ভাসমান এ হাটের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে এবং বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না ও রোদে পুড়তে হবে না ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের।

নেছারাবাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নেছারাবাদ উপজেলায় শত বছরের পুরনো এ ভাসমান নৌকার হাট। উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট নৌকা তৈরি করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে এই  হাটে। এখানে ক্রেতাদের পাশাপাশি পর্যটকরা ও আসছেন।  আমরা চাই এটি আরো সমৃদ্ধ হোক, যারা এর সাথে জড়িত আমরা তাদের সুযোগ সুবিধার কথা ভাবছি।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান এ হাট নিয়ে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জানালেন।

তিনি বাসসকে বলেন, দেশি ক্রেতাদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতারাও এখানকার নৌকা পছন্দ করছেন। 

বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত এসে এখানকার নৌকা ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিছুদিন পূর্বে এক জার্মান নাগরিকও এখানকার নৌকা ক্রয় করে নিয়ে গেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এখানকার নৌকা দেশের বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকায় ব্যবহারের চিন্তা করছে। খুব শীঘ্রই এ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল এখানে আসবেন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে তাদের দেওয়া ডিজাইন অনুযায়ী নৌকা তৈরির চুক্তি করবেন। তিনি মনে করেন, এর ফলে ভাসমান এ নৌকা হাটের ব্যবসার পরিধি ধীরে ধীরে আরো প্রসার লাভ করবে।