শিরোনাম
প্রতিবেদন : আব্দুর রাজ্জাক
কুষ্টিয়া, ২৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : নতুন স্বাধীনতার সূর্যোদয়ে বুক ভরে শ্বাস নিতে চেয়েছিল স্কুল ছাত্র মাহিম হোসেন। তাই স্বৈরশাসনের জিঞ্জির ভেঙে ফেলতে ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনে শামিল হয়েছিল সে।
হাসিনার দুঃশাসনের পতনে যখন দেশজুড়ে বিজয়ের বাঁধভাঙা ঢেউ, তখন মাহিমও ছিল সেই আনন্দ মিছিলে।
কিন্তু পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে নিভে যায় তার জীবনের আলো।
নতুন ভোর দেখার আগেই নিঃশব্দে থেমে যায় তার নিঃশ্বাস।
মায়ের কোল আর বাবার কাঁধে রেখে যায় শুধু শহীদের তকমা আর বুকফাটা আহাজারি। মাহিমের মতো শহীদের আত্মত্যাগে লেখা হচ্ছে বাংলার নতুন ইতিহাস।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা বামন পাড়ার দিনমজুর টাইলস মিস্ত্রী ইব্রাহিম (৪৮) ও রেহেনা খাতুনের (৪০) তিন ছেলের বড় জুলাই শহীদ মাহিম হোসেন(১৬)।
শহীদ মাহিম হোসেন ইয়াকুব আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিল। ছোট দুই ভাই নাঈম (১৪) ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও সবার ছোট নেয়ামুল (৯) প্রাথমিকের ছাত্র। বাবা ইব্রাহিমের টানাপোড়েনের সংসারে হাল ধরবে বলে লেখা পড়ার পাশাপাশি কাজ করতো। চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিল।
গত বছরের জুলাই মাসে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে শুরু থেকে আগস্টের ৪ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। আগস্টের ৪ তারিখে কুষ্টিয়া ও কুমারখালীতে ছাত্রজনতার ওপর বর্বর হামলা চালায় পুলিশ। ওইদিন কুমারখালীতে দফা এক দাবি এক স্লোগানে আন্দোলনে প্রথম সারিতে থেকে আন্দোলন করে মাহিম হোসেন।
পুলিশের ছোড়া টিয়ার সেল আঘাত হানে মাহিমের শরীরে। আঘাত গুরুতর না হলেও আস্তে আস্তে টিয়ার সেলের বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে তার ফুসফুসে। ১৯ আগস্ট মাহিমের স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতি হয়। প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে তাকে খোকসা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেভর্তি করা হয়।
অবস্থার আরও অবনতি হলে রাত এক টায় চিকিৎসক কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল রেফার করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনুমানিক সকাল ১১ মৃত্যু বরণ করে শহীদ মাহিম হোসেন। এখানে থেমে যায় দুরন্ত দুর্বার এক জুলাই সৈনিকের জীবন প্রদীপ।
হাসিনা মুক্ত দেশ হলে তার নিপীড়ন মুক্ত বুক ভরা নিঃশ্বাস নিতে পারে নি মাহিম। শহীদের খ্যাতি পেয়েছে কিন্তু পিতার কাঁধে ছেলের লাশের বোঝার ভার এক রত্তিও কমেনি দিনমজুর ইব্রাহিমের।
স্থানীয়রা বলেন, মাহিম শুরু থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অংশগ্রহণ করত। এলাকায় তার বন্ধুদের নিয়ে অনেক বাধা উপেক্ষা করে যোগ দিত আন্দোলনে। সে সাহসী যোদ্ধা ছিল। মাহিদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেন ভুলণ্ঠিত না হয় সেটাই আমাদের দাবি।
ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় শহীদ মাহিমের বাবা ইব্রাহিম বাসসকে বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। এটা শুধু আমার একার না, এলাকার ও গর্ব। কিন্তু ফ্যাসিবাদী জুলুম ও বৈষম্যমুক্ত যে দেশের স্বপ্ন মাহিম, আবু সাঈদরা দেখেছিল তা যেন বাস্তায়ন হয়।’
তিন বলেন, ‘আমাদের সহযোগিতা পাওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ শহীদের স্বপ্নপূরণ। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।,
মা রেহানা খাতুন অশ্রুসিক্ত নয়নে বাসসকে বলেন, আমার ছেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি ওর বাবাকে সাহায্য করত। ছেলে শহীদ হয়েছে এটা গর্বের কিন্তু আমার নাড়িছেঁড়া ধনহারানোর বেদনা তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি।