শিরোনাম

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): গত এক বছরে সুন্দরবনে ডাকাত ও জলদস্যু বিরোধী অভিযান চালিয়ে ৩৮ টি আগ্নেয়াস্ত্র, দুইটি হাত বোমা, ৭৪ টি দেশীয় অস্ত্র, ৪৪৮ রাউন্ড কার্তুজ এবং ডাকাতদের কাছে জিম্মি থাকা ৫২ জন নারী ও পুরুষ উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড।
অভিযানে অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামাদি উদ্ধার ও ৪৯ জন ডাকাতকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৬৭৪ পিস ইয়াবা, ১৩ কেজি গাঁজা, ১ হাজার ২৫৬ বোতল বিদেশি মদ ও বিয়ারসহ মোট ৫১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে আজ কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ অভিযান চালিয়ে ৮২৪ কেজি হরিণের মাংস ও হরিণের বিভিন্ন অঙ্গসহ ৬০০ টি হরিণের ফাঁদ জব্দ এবং ২৯ জন হরিণ শিকারিকে আটক করা হয়।
বিভিন্ন অভিযানে ১ হাজার ৪০০ পিসেরও বেশি গেওয়া ও গড়ান কাঠ, দুইটি তক্ষক, ৬২ টি বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ এবং ৩ হাজার ৪০০ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়। অবৈধ মৎস্য আহরণ বিরোধী অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা সমমূল্যের ১২ কোটি মিটারেরও বেশি অবৈধ জাল এবং ১২০ কোটি টাকা সমমূল্যের রেণুপোনা, ১৪ হাজার কেজি জেলি পুশকৃত চিংড়ি জব্দ করা হয়।
উপকূলীয় অঞ্চলে আর্তমানবতার সেবায় কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন চলতি বছরে ২ হাজারের বেশি দুস্থ, অসহায় ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করেছে। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন পরিবার কল্যাণ সংঘ উপকূলীয় অঞ্চলে ৫০০ এর বেশি অসহায়, গরীব ও দুঃস্থ শীতার্তদের সহায়তা করেছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের উপকূলীয় ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বলেও জানায় কোস্ট গার্ড।
বিশেষ করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলদস্যু ও বনদস্যু নির্মূল, জেলেদের নিরাপত্তা প্রদান এবং সমুদ্র ও নৌপথে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় ও নদীতীরবর্তী অঞ্চল, মোংলা বন্দর ও অন্যান্য কেপিআই সমূহের নিরাপত্তা প্রদানসহ চোরাচালান প্রতিরোধ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে।
জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, জেলে, মাঝি, পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে পরিবেশ ও বন রক্ষা, বনজ প্রাণী সংরক্ষণ, দুর্যোগকালীন উদ্ধার কার্যক্রম এবং অগ্নি নির্বাপণ বিষয়ে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ প্রদানসহ কিশোর-তরুণদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রতকরণ এবং মাদক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানাবিধ কার্যক্রম চালাচ্ছে কোস্ট গার্ড।
এছাড়াও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে লক্ষ্যে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের আওতাধীন উপকূলীয় এলাকাসমূহে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য কোস্টগার্ড সদস্যদের নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। অত্র অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তা এবং অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত থাকবে।
উক্ত অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সফরকালীন সময়ে কোস্ট গার্ড নৌপথে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। সুন্দরবনের আগত পর্যটকদের দুর্ঘটনা রোধে কোস্ট গার্ড পর্যটকবাহী নৌযানসমূহে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে সুন্দরবনে আগত পর্যটকদের নৌপথে সার্বিক নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বন বিভাগ, মৎস্য অধিদপ্তর এবং অন্যান্য মেরিটাইম সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে আসছে। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন শুধু উপকূলীয় নিরাপত্তা নয়, বরং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জান-মাল রক্ষা, বন্দর নিরাপত্তা, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।