বাসস
  ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:১১

আধুনিক কৃষিযন্ত্রের দাপটেও হারায়নি হালচাষের লাঙ্গল

ছবি : বাসস

বিপুল ইসলাম

লালমনিরহাট, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার সত্ত্বেও লালমনিরহাটে জমি হালচাষের জন্য ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গলের বিক্রি এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে আলু চাষ ও কিছু নির্দিষ্ট কৃষিকাজে লাঙ্গলের প্রয়োজন থাকায় জেলার বিভিন্ন হাটে এই কৃষি উপকরণ এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

এক সময় গ্রামবাংলার কৃষি ছিল গরু ও লাঙ্গলনির্ভর। কাকডাকা ভোরে মাঠে নেমে হালচাষ, মই দিয়ে জমি সমান করা ও বীজ বপনের দৃশ্য ছিল স্বাভাবিক চিত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের ব্যবহার বাড়লেও শীতকালীন সবজি চাষ, নিচু জমি এবং যান্ত্রিক যান চলাচলের অনুপযোগী এলাকায় এখনো লাঙ্গল কার্যকর ভূমিকা রাখছে। 

কৃষকদের মতে, ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা জমি পুরোপুরি সমান করা কঠিন হওয়ায় সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ ও আলুর কান্দি তৈরিতে লাঙ্গলের বিকল্প নেই।

জেলা সদরের বড়বাড়ী বাজারের সাপ্তাহিক হাটে প্রতি বুধবার, শনিবার ও রোববার লাঙ্গলের বেচাকেনা হয়। পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বৈরাগী কোমর এলাকার লাঙ্গল বিক্রেতা মো. সামিউল হক (৪০) বাসসকে জানান, মানভেদে প্রতিটি লাঙ্গল ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বড়বাড়ী ইউনিয়নের সাদিকনগর এলাকার লাঙ্গল বিক্রেতা বকুল মিয়া (৫০) বলেন, এক সময় লাঙ্গল ছিল গ্রামবাংলার প্রধান কৃষি উপকরণ। আধুনিক যন্ত্রের কারণে এর ব্যবহার কমলেও বর্তমানে আলু চাষের জন্যই সীমিত পরিসরে লাঙ্গলের চাহিদা রয়েছে।

লাঙ্গল কিনতে আসা কৃষক মমিনুল হক (৫০) বাসসকে জানান, শাকসবজি উৎপাদনে এখনো লাঙ্গলের প্রয়োজন হয়। বাড়িতে দুটি লাঙ্গল থাকলেও কাজে সংকুলান না হওয়ায় নতুন আরেকটি কিনতে এসেছেন। অপর কৃষক লিতু আলি (৫২) বলেন, আগে সব কৃষিকাজ লাঙ্গল দিয়ে করা হলেও এখন তা সীমিত আকারে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জেলার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বাসসকে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের ফলে গরু ও লাঙ্গলনির্ভর হালচাষ অনেকটাই কমে গেছে।

কৃষকরা সময়, পরিশ্রম ও ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য যন্ত্রনির্ভর চাষে ঝুঁকছেন। তবে বাজারে যে লাঙ্গল বিক্রি হচ্ছে, তা মূলত আলুর কান্দি তৈরির কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, গরুর দাম ও গো-খাদ্যের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের মতো গরু পালনের প্রবণতা কমেছে। ফলে সময়ের পরিক্রমায় কৃষিকাজে লাঙ্গলের ব্যবহার হ্রাস পেলেও নির্দিষ্ট কিছু কৃষিকাজে এখনো এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।