শিরোনাম

\ ওমর ফারুক \
রাজশাহী, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতে রাজশাহীর মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু, বয়ষ্ক ও খেটে নিম্ন আয়ের মানুষ। তীব্র শীতের কারণে তারা বেশি সময় ধরে মাঠে কাজ করতে পারছেন না। আবার কাজে না গেলেও দুই মুঠো খাবার জোটে না। তাই বাধ্য হয়েই খেটে খাওয়া দিনমজুরদের বের হতে হচ্ছে কাজে।
গত সপ্তাহের শুরুর দিক থেকে শিক্ষানগরী রাজশাহী ও এর আশেপাশের উপজেলাগুলোতে কনকনে শীত পড়েছে।
তবে গত ৩/৪ দিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে অনেক। সকাল থেকে দিনভর সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও সেটি দীর্ঘক্ষণ থাকে না। এছাড়া কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। এতে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। রাতের পাশাপাশি দিনের বেলায়ও কনকনে ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষ।
ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে এসব ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্র, নিরাপদ আশ্রয় ও পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে তাদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে চরম অনিশ্চিত ও কষ্টকর। ভোরের আলো ফোটার আগেই নগরের ব্যস্ত এলাকায় যেখানে মানুষ কোট-সোয়েটারে নিজেদের ঢেকে নিচ্ছেন, সেখানে ফুটপাতে থাকা মানুষগুলো পুরোনো কাপড়, পলিথিন কিংবা বস্তা গায়ে জড়িয়ে ঠাণ্ডা ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তবে ব্যর্থ চেষ্টায় শীতে কষ্ট পাচ্ছেন তারা।
নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ছিন্নমূল মানুষজন দলবেঁধে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন।
এতে একদিকে শীত থেকে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। কোথাও কোথাও পথচারীদের দেওয়া পুরোনো কাপড়ই তাদের একমাত্র ভরসা। শীত যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। মানবিক উদ্যোগ ও সংগঠিত সহায়তা ছাড়া এ মানুষগুলোর শীত পার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রেললাইনের ধারে বসবাসকারী এক নারী বলেন, গরমের সময় যেখানে সেখানে পড়ে থাকা যায়। কিন্ত ঠাণ্ডায় ছোট বাচ্চা নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়েছি। নিজেরা কষ্ট সহ্য করে হলেও থাকছি। কিন্ত ছোট বাচ্চার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। এখন আমাদের গরম কাপড় দরকার।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ছিন্নমূল ও পথশিশুরা ঠাণ্ডার মধ্যে গরম কাপড় ছাড়াই জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছেন। কেউ কেউ পলিথিন ও ছেঁড়া চাদর গায়ে দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আবার তুলনামূলক একটু গরম জায়গার জন্য নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন। এক বৃদ্ধ নারী বলেন, আমি পেটের দায়ে এই শহরে ভিক্ষে করি। এখন ঠাণ্ডার কারণে ভিক্ষে করতে বের হতে পারছি না। আমাদের গরম কাপড় সাহায্য দরকার।
বাইরুল নামের এক রিকশাচালক জানান, অন্য সময়ে ভোর হলেই রিকশা নিয়ে বের হই। কিন্ত শীত বেশি পড়ার কারণে আগের মতো বের হতে পারছি না। কোনোমতে বের হলেও রাস্তায় বেশি সময় থাকতে পারছি না। শীতের কারণে খুব সমস্যার মধ্যে পড়েছি। আবার বের না হলেও ছেলেমেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে পারবো না।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক তারেক আজিজ জানান, ২৬ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৭ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রোববার ২৮ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার পরিমাণ আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার বাসসকে বলেন, রাজশাহী মহানগর, জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভায় এ পর্যন্ত মোট সাড়ে ২৭ হাজার পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আমরা আবার কম্বল কেনার জন্য ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে দ্রুত কম্বল কিনে বিতরণ কার্যক্রম শেষ করা হবে।