শিরোনাম

ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির অবদানের কথা স্মরণ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে ঢাকার পূর্বাচলে ৩০০ ফিট সড়কে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেন তারেক রহমান। সেখানে দলের পক্ষ থেকে নির্মিত মঞ্চে তিনি ১৬ মিনিট বক্তৃতা করেন। এসময় মঞ্চে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে স্মরণ করে বলেছেন, ‘কয়েকদিন আগে ওসমান হাদি শহীদ হয়েছেন। ওসমান হাদি চেয়েছিলেন, এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পাক। ৭১-এ যারা শহীদ হয়েছে, ২৪-এ যারা শহীদ হয়েছে, তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘একাত্তরে দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালে তেমন সর্বস্তরের মানুষ, সবাই মিলে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পেতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে পাহাড়ের, সমতলের, মুসলমান, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই আছে। আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন নারী, পুরুষ, শিশু যেই হোক না কেন নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে, যেন নিরাপদে ফিরতে পারে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মই আগামীতে দেশ গড়ে তুলবে।’ এসময় গণতান্ত্রিক, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দেশকে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি। পরপর তিন বার বলেন, ‘আমরা দেশের শান্তি চাই।’
মার্টিন লুথার কিংয়ের আই হ্যাভ এ ড্রিম উক্তির কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান।’ দেশকে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা রয়েছে। প্রত্যেক মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
নির্বাসন ও সংগ্রামের দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মায়ের কাছে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। পরে তারেক রহমান সেখানে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলিঙ্গন ও কুশল বিনিময় করেন।
এছাড়া, বিমানবন্দরে ফুলের মালা দিয়ে তারেক রহমানকে বরণ করে নেন তাঁর শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে খালি জায়গায় খালি পায়ে মাটি স্পর্শ করে এক মুঠো মাটি হাতে নেন তারেক রহমান। এরপর বুলেট প্রুফ গাড়ি বাদ দিয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ খচিত লাল সবুজের রঙের একটি বাসে চড়ে তাঁর জন্য অপেক্ষমাণ সংবর্ধনা মঞ্চের দিকে রওনা হন। তাঁর সাথে বাসে ছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ববৃন্দ। পুরো রাস্তায় তিনি বাসটির সামনে থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে রাখে পুরো পথ।
এর আগে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় তিনি স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে রওনা হন।
আজ সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সিলেটে প্রায় এক ঘণ্টার গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ডের পর তারেক রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।
বিমানবন্দর থেকে লাল-সবুজ রঙে সাজানো বাসে করে রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারেক রহমান।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারেক রহমানের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হলো সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর গুরুতর অসুস্থ মমতাময়ী মা, বাংলাদেশের অভিভাবক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া। তবে, বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে, যাত্রাপথের মাঝামাঝি রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় দলের পক্ষ থেকে তৈরি করা গণঅভ্যর্থনা মঞ্চে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে দোয়া কামনা, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরপর এভারকেয়ার হাসপাতাল মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে রওনা হন।
দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বসাধারণের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে। এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং সর্বজনীন প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার মেলবন্ধন, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসমাগম।