শিরোনাম

মো. মামুন ইসলাম
রংপুর, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): রংপুর বিভাগ থেকে বিএনপির প্রায় ৫ লাখ নেতা-কর্মী ও সমর্থক ঢাকায় রওনা হয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘রাজসিক প্রত্যাবর্তন’ প্রত্যক্ষ করতে। তাকে গণতন্ত্র ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করছেন তারা।
আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে তার ওপর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আরোপিত ১৮ বছরের নির্বাসনের অবসান ঘটবে, যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল বলে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন।
আগামীকাল ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষ্যে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় তারেক রহমানকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে দেশব্যাপী বিএনপি নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি রংপুর বিভাগের আট জেলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ, আশা ও আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
রংপুর মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও কারমাইকেল কলেজ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম মিজু বাসস’কে বলেন, শুধু রংপুর জেলা থেকে অন্তত ৫০ হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী আগামীকাল ঢাকায় তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বাস, মাইক্রোবাস, ট্রেন ও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে ঢাকায় যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় পৌঁছে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
মূলত তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রংপুর জেলার আটটি উপজেলা ও পুরো রংপুর বিভাগজুড়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
মিজু আরো বলেন, ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। অনেকেই গত দু’দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনে দল মনোনীত ছয় প্রার্থীর প্রত্যেকে অন্তত ৫ হাজার করে নেতা-কর্মী ও সমর্থক নিয়ে ঢাকায় সমবেত হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই বড় আয়োজনের দু’দিন আগ থেকেই বিভিন্ন উপজেলার এমপি প্রার্থীদের উদ্যোগে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বাস, ট্রেন ও মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় যাচ্ছেন।
অধিকাংশ নেতা-কর্মী দলবদ্ধভাবে ঢাকায় যাচ্ছেন। ঢাকায় তাদের থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য ব্যয়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন দলীয় নেতারা।
এছাড়া কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে বা পছন্দের পরিবহনে আগেভাগেই ঢাকায় গেছেন তাদের প্রিয় নেতার ‘ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন’ প্রত্যক্ষ করতে।
স্মরণীয় এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে গত কয়েক দিন ধরে নগর, বন্দর, হাটবাজার ও গ্রামে গ্রামে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মিছিল ও সমাবেশ করছেন।
রংপুর মহানগর জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহির আলম নয়ন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বদেশে স্বাগত জানিয়ে সংগঠনটি গত কয়েক দিন ধরে রংপুর নগরীতে স্বাগত মিছিল করছে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আগেভাগেই ঢাকায় চলে গেছেন আগামীকালের বিশাল সংবর্ধনায় যোগ দিতে। কেউ ঢাকায় অবস্থান করছেন, আর বাকিরা আজ রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
প্রস্তুতিমূলক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি দলবদ্ধভাবে বাস, ট্রেন ও অন্যান্য পরিবহনে ঢাকায় যাবেন।
এছাড়া, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছেন। কেউ দলীয় পরিবহনে, কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাচ্ছেন।
রংপুর মহানগর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নূর হাসান সুমন বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ বর্তমান সংকট থেকে মুক্তি পাবে।
তিনি আরো বলেন, এ কারণে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, সাধারণ ব্যবসায়ী, তরুণ এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন— এমন মানুষজনও আমাদের সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে তারেক রহমানকে কাছ থেকে দেখতে চান। মানুষের এই আগ্রহ আমাদের নেতা-কর্মীদের অনুপ্রাণিত করছে।
এ কারণে দলবদ্ধভাবে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই নিজ উদ্যোগে ঢাকায় যাবেন প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে। এ পর্যন্ত রংপুর থেকে কয়েকশ নেতা-কর্মী একাধিক বাস ও মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় গেছেন।
রংপুর নগরী ও সদর, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, কাউনিয়া, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা থেকে কয়েকশ ভাড়াকৃত মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস ও বিশেষ ট্রেনে করে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় যাচ্ছেন।
ঢাকায় যাতায়াতকালে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো মাঠপর্যায়ে সমন্বয় টিম গঠন করেছে।
রংপুর মহানগরীর কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টার ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরা বাসস’কে জানান, রংপুর থেকে ঢাকা রুটে দিন-রাত মিলিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০০ বাস চলাচল করে এবং অধিকাংশ বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
একইভাবে রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে অগ্রিম কোনো টিকিট নেই।
রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম বারী রাজ বলেন, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় পরিবহনের জন্য মালিক সমিতি থেকে ২৫টি বাস সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রংপুর থেকে শত শত মানুষ তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় যাচ্ছেন। এখন কোথাও খালি যানবাহন পাওয়া কঠিন। শুধু বাস নয়, অন্যান্য পরিবহনেও একই অবস্থা।
রংপুর জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, রংপুর জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রতিটি থেকে ৫ হাজার করে নেতা-কর্মী ধরলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ হাজার।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, আগামীকাল তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক মুহূর্তে যোগ দিতে রংপুর জেলা থেকে অন্তত ৫০ হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী, সমর্থক, সাধারণ শিক্ষার্থী ও মানুষ ঢাকায় যাবেন।
কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও রংপুর-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
তিনি বলেন, তার আসনে দু’টি উপজেলা রয়েছে এবং তিনি বাস, মাইক্রোবাস ও ট্রেনসহ বিভিন্ন পরিবহনে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় আনার উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমার মতো জেলার অন্য পাঁচজন বিএনপি মনোনীত প্রার্থীও নিজ নিজ আসন থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করেছেন এবং খাবার-দাবারসহ সার্বিক ব্যয় বহন করছেন।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আগামীকাল রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকা গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে জনসমুদ্রে পরিণত হবে।