বাসস
  ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৭

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

ফাইল ছবি

মুহাম্মদ আমিনুল হক 

সুনামগঞ্জ, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): মরমি কবি ও সাধক হাসন রাজার ১৭১ তম জন্মদিন আজ। ১৮৫৪ সালের এই দিনে (২১ ডিসেম্বর) সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষণশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মরমি কবি হাসন রাজা তার গভীর মরমি চেতনা এবং লোকজ গানের মাধ্যমে এক অবিস্মরণীয় স্থান করে নিয়েছেন বাংলা সংস্কৃতিতে। তিনি একাধারে জমিদার ছিলেন, আবার সুরের সাধকও ছিলেন। এক সময় জমিদারি জীবন ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক চেতনা ও সুফি দর্শন সাধনায় বৈরাগ্যজীবন বেছে নেন তিনি। তার গবেষণা সাধনা ও শিল্পকর্ম ছিল গণকল্যাণমুখী। মরমি এই কবি নিজের সৃষ্টিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দাঁড় করিয়ে গেছেন।

অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা হাসন রাজা যেমন তিনি লিখছেন- ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে...’, ‘আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে...’, ‘লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালানা আমার...’, ‘আগুন লাগাইয়া দিলও কুনে হাসন রাজার মনে...,’ ‘গুড্ডি উড়াইল মোরে...’, ‘ মৌলার হাতের ডুরি...’ সহ আরো অনেক গান।

হাসন রাজার পুরো নাম দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী। ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৬১ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষ্মণশ্রী গ্রামের (তেঘরিয়া) জমিদার পরিবারে জন্ম। বাবার নাম দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী। হাসন রাজার সৃষ্টি গান ও সুর মানুষের মনে গেথে আছে যুগ যুগ ধরে। সুনামগঞ্জ তথা সিলেট অঞ্চলের গণ্ডি ছাড়িয়ে হাসন রাজা হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের তথা পৃথিবীজুড়ে সমগ্র বাঙালির সম্পদ।

জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীর তৃতীয় সন্তান হাসন রাজা। মাতার নাম হুরমত বিবি। পূর্বপুরুষের অধিবাস ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের অয্যোধ্যায়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে হাসন রাজা জমিদারিতে অভিষিক্ত হন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে পাঁচ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন তিনি। জমিদারি জমানায় তার গানে সহজ সরল স্বাভাবিক ভাষায় মানবতার চিরন্তন বাণী যেমন উচ্চারিত হয়েছিল, তেমনি আধ্যাত্মিক কবিও ছিলেন তিনি। সকল ধর্মের বিভেদ অতিক্রম করে তিনি গেয়েছেন মাটিও মানুষের গান। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ১৯২৫ সালে কলকাতায় এবং ১৯৩৩ সালে লন্ডনের হিবার্ট বক্তৃতায় হাসন রাজার দুটি গানের প্রশংসা করেছিলেন। ১৯০৭ সালে হাসন রাজার রচিত ২০৬টি নিয়ে গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। সেই সংকলনটির নাম ছিল ‘হাসন উদাস’। এর বাইরে আরও কিছু গান ‘হাসন রাজার তিনপুরুষ’সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে।

১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর হাসন রাজা মৃত্যুবরণ করেন। লক্ষণশ্রীতে তার মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। তার কবর তিনি মৃত্যুর পূর্বেই নিজে প্রস্তত করে রেখেছিলেন। কথিত আছে, বিখ্যাত ‘মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়া রে, কান্দে হাসন রাজার মন ময়না রে’ ...’ গানটি হাসন রাজা তার কবরকে নিয়ে রচনা করেছিলেন। কবরে এপিটাফ হিসেবে এ গানের কলি রয়েছে।

বাংলা সনের পৌষ মাস হাসন রাজার জন্ম ও মৃত্যুদিনের মাস। এ মাসেই দেশে ও বিদেশে হাসন রাজার স্মরণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তার জন্মস্থান সুনামগঞ্জ শহরে ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতি বছর পৌষ মাসে হাসন মেলা বা হাসন লোক উৎসব আয়োজনের রেওয়াজ প্রচলিত ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ব্যাঘাত ঘটে ২০০৭ সালে। হাসন রাজার প্রোপৌত্র কবি মমিনুল মউজদীন সুনামগঞ্জ পৌরসভা চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণের পর উৎসবে ছেদ পড়ে।

স্থানীয় সুধিজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ হাসন রাজার স্মরণে অনুষ্ঠিত পৌষ মাসে হাসন মেলা বা হাসন লোক উৎসব আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি।