বাসস
  ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:০৪

ফ্যাসিস্ট শক্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে টার্গেট কিলিং এ নেমেছে : ১৮ ছাত্র সংগঠনের বিবৃতি

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : গণহত্যাকারী পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি পরিকল্পিতভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে টার্গেট কিলিং মিশনে নেমেছে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে ১৮টি ছাত্র সংগঠন। একই সাথে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর কাপুরুষোচিত বর্বর হামলার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা এবং জড়িতদের শাস্তিসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

আজ বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

বিবৃতিতে ছাত্র সংগঠনগুলো বলেছে, বাংলাদেশকে নিয়ে আজ বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপতৎপরতা চলছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হলেন এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশের রাজনীতিতে বিভাজন ও নিজেদের পুনর্বাসনের নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই জুলাই যোদ্ধা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন কণ্ঠস্বর শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যার জঘন্য অপচেষ্টা করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদিকে পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা প্রমাণ করে, পতিত ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী কার্যক্রম এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং গণহত্যাকারী আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত হচ্ছে। ভারতে অবস্থানরত পতিত ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার দোসররা এখন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের টার্গেট বানিয়েছে। মুজিববাদ, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যারা দৃপ্ত কণ্ঠে কথা বলছে-তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করাই এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।’

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি-এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা নয় বরং এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও নেতৃত্ব ধ্বংস করে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুসংগঠিত অপারেশন। এই বর্বর হামলা প্রমাণ করে, গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তি এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তারা পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে।

তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হত্যাচেষ্টার ৫ দিন অতিক্রান্ত হলেও হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে কোনো দৃশ্যমান ও কার্যকর অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। অপরদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি গণহত্যায় জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের অসংখ্য খুনি ও দুষ্কৃতকারী ধারাবাহিকভাবে জামিনে মুক্ত হয়ে সারাদেশে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গোপন হামলার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এখনো টকশো, কলাম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের পক্ষে সহানুভূতি উৎপাদনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান এবং শহীদদের রক্তের সঙ্গে নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা। গণমাধ্যমে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট এজেন্ডার বাহক সাংবাদিক নামধারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। 

৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলায় জড়িত সকল সন্ত্রাসীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান, ভারতীয় প্রক্সি ফ্যাসিস্ট শক্তির মূল হোতা খুনি শেখ হাসিনাসহ সকল অপরাধীকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা, ফ্যাসিস্ট শক্তির আর্থিক উৎসের সঙ্গে যুক্ত সকল ব্যবসায়ীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা ও গণমাধ্যমে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও জনজীবনের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বিবৃতি প্রদানকারী নেতৃবৃন্দ ও সংগঠনসমূহ হচ্ছে: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর সভাপতি মুনতাছির আহমেদ, জাগপা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি মুহাম্মদ রায়হান আলী, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর) কাজী ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজীজ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ সভাপতি বি এম আমির জিহাদি, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন সভাপতি সৈয়দ মো. মিলন, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ এর সভাপতি খালেদ মাহমুদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি) সভাপতি মেহেদি হাসান মাহবুব, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলন সভাপতি আবু দারদা, ভাসানী ছাত্র পরিষদ সভাপতি মোশাররফ হোসেন, নাগরিক ছাত্র ঐক্য আহবায়ক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ সভাপতি মোহাম্মদ প্রিন্স আল আমিন, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্র ফেডারশেন সভাপতি মোহাম্মদ নুর আলম, ইসলামী ছাত্র ফোরাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় আহবায়ক প্যানেল সদস্য শেখ সাব্বির আহমদ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন সভাপতি লামিয়া ইসলাম এবং ন্যাশনাল ছাত্র মিশন সভাপতি মো. রেজাউল ইসলাম।