শিরোনাম

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রতিটি মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ ও নির্মল পরিবেশ অপরিহার্য। নির্মল পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। স্যানিটেশন ব্যবস্থা বলতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মানুষ ও জীবজন্তুর মলত্যাগ ব্যবস্থাপনা ও নিষ্কাশন, সকল কাজে নিরাপদ পানির ব্যবহার, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ সমস্ত কিছুকেই বুঝায়।
সবার জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ও শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর অক্টোবর মাসকে জাতীয় স্যানিটেশন মাস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
স্যানিটেশন মাসে প্রতিবছরই বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি থাকে। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, খোলা স্থানে মলত্যাগ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্যানিটেশন কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশব্যাপী জনগণের মাঝে স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করাই উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মূল্য উদ্দেশ্য।
উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
গণমাধ্যমগুলোতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, বিশেষ করে খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এরফলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতরের জরিপে দেখা গেছে, কয়েক বছরে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। একসময় বাংলাদেশের শতকরা ৪২ ভাগ লোক উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতো। বর্তমানে এই হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে আরো দেখা গেছে, বিশ্বের ১৬টি দেশ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ এর হার শতকরা ২৫ ভাগের বেশি কমাতে সক্ষম হয়েছে এবং বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘ স্যানিটেশনকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থার নানাবিধ কর্মসূচি সবার জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে চলেছে। সার্কভূক্ত আঞ্চলিক দেশগুলোর স্যানিটেশন মান উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে।
পৃথিবীর বহু মানুষ এখনো নিরাপদ পানি ও উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এমনকি পার্শ্ববতী দেশগুলোর থেকেও বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। তারপরও বস্তি এলাকা, দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নত স্যানিটেশন নিশ্চিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে আরো এগিয়ে আসতে হবে।
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বিকল্প নেই। তবে সুন্দর পরিবেশ গড়তে যত না অর্থের প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা সৃষ্টি করা। স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের বিষয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ফলে জনগণকে স্যানিটেশনের অভাবজনিত কারণে সংক্রামক রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আগামী প্রজন্ম ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েডের মত মারাত্মক সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।
বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন একটি মৌলিক মানবিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কারণ উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা শুধু সার্বিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নই নিশ্চিত করেনা, একই সাথে তা দারিদ্র্য বিমোচনকেও সরাসরি প্রভাবিত করে। সবার জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সুশীল সমাজ ও জনগোষ্ঠিভিত্তিক সংগঠন সমূহের সক্রিয় ও কার্যকর অংশগ্রহণ এ সফলতার দ্বারপ্রাপ্তে নিয়ে যেতে পারে। তাই স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য যে কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি জরুরি, তা হচ্ছে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের খারাপ অভ্যাস এবং আচরণের গুণগত পরিবর্তন আনা।
সরকার সবার জন্য স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে স্যানিটেশনের এ সাফল্য অর্জনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা এবং গণমাধ্যমসহ সকলের সমন্বিত সহায়তা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টা মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আমাদের আরো কাজ করতে হবে। খোলা জায়গায় মলত্যাগ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দেশব্যাপী স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো মনোযোগী হতে হবে। দেশের জনগণের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। শীঘ্রই শতভাগ উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো আমরা। এমন প্রত্যয় হোক আমাদের আন্তরিক।