শিরোনাম

ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও গণভোট দেশে নতুন রাজনৈতিক ধারা, অর্থবহ সংস্কার ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রকে আরও এগিয়ে নেবে বলে তারা আশা করছে।
সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) তফসিল ঘোষণার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশ এখন ‘১২ ফেব্রুয়ারির একটি অর্থবহ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে’।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শেষ শর্ত ছিল- গণভোট অবশ্যই ভোটের দিনই হতে হবে। আমরা এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্যসরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।’
পাটোয়ারী প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং প্রতি ভোটারে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বা প্রার্থীপ্রতি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়সীমা নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
তিনি সব প্রার্থীর ক্ষেত্রে এ ব্যয়সীমা কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে বৈষম্যের সুযোগ না থাকে।
ইসি ও সরকারের সদিচ্ছার কথাও উল্লেখ করেন তিনি, তবে নিরপেক্ষতা ও পরিচালন-সক্ষমতা নিয়ে কিছু উদ্বেগের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেন- নারায়ণগঞ্জে এনসিপির তিন কর্মীকে ছুরিকাঘাত, ঢাকার ২ নম্বর আসনে এনসিপির প্রচারণা কাভার করতে যাওয়া এক সাংবাদিকের ওপর হামলা এবং কয়েকটি আসনে অস্ত্রের উপস্থিতির খবর, যা নির্বাচন পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘অতীতে অর্থবল, পেশিশক্তি ও গডফাদার সংস্কৃতি নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করেছে। নির্বাচন কমিশন এ প্রবণতা এবার ঠেকাতে পারবে কি না—সে বিষয়ে আমরা এখনো সম্পূর্ণ আশ্বস্ত নই।’
তিনি আরও বলেন, এখনও কমিশনের অরাজনৈতিকভাবে কাজ করার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
‘উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাই, নিজ নিজ ভোটকেন্দ্র নিজেরাই রক্ষা করুন। কোনো অস্ত্রধারী, অপরাধী গোষ্ঠী বা দুর্নীতি, মাদক বা অর্থপাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ যেন ভোটকে প্রভাবিত করতে না পারে।’
এনসিপি নেতা বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য যে শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ প্রয়োজন, তার পর্যাপ্ত ইঙ্গিত তারা এখনও দেখছেন না। তিনি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দলীয় দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু বর্তমান কমিশনই নির্বাচন পরিচালনা করছে, তাই ‘কথায় নয়, কাজে’ প্রমাণ করতে হবে যে তারা জনগণের সঙ্গে আছে, কোনো রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে নয়।
এসময় এনসিপির নারী প্রার্থীদের প্রতি অনলাইন হয়রানির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী।
তিনি জানান, নারীকর্মী ও তরুণ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাইবার হয়রানি ঠেকাতে মনিটরিং সেল গঠনের যে আহ্বান তিনি জানিয়ে আসছেন, সে বিষয়ে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি’। তিনি অবিলম্বে এ সেল গঠনের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ‘এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে’ এবং নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে সংস্কার-প্রক্রিয়া বা নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে যে আশঙ্কা ছিল তা সত্য হয়নি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জনগণ গণভোট ও সংস্কার পরিষদের মাধ্যমে চলমান সংস্কারকে এগিয়ে নেবে। তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে প্রচারণায় আহ্বান জানান।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এনসিপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, গণভোট ও সংস্কার পরিষদ, যারা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে, এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ায় তাদের প্রধান আপত্তিগুলো দূর হয়েছে।
‘যেহেতু সংস্কার-প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে, আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি,’ তিনি বলেন।
তিনি জানান, ঘোষিত তফসিলে আপাতত তাদের কোনো আপত্তি নেই; তবে বিস্তারিত পর্যালোচনায় অসঙ্গতি ধরা পড়লে তা জানানো হবে।
সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন কি না- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত তিনি সরকারে দায়িত্বে থাকায় দল এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
তিনি বলেন, ‘সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রতি অঙ্গীকার থাকলে সবাইকে স্বাগত। তবে আমরা কখনো ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করি না। মাহফুজ আলম সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য ছিল- একটি সুশৃঙ্খল ও সভ্য সমাজ গড়ার দীর্ঘদিনের অবস্থানের অংশ হিসেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সমতা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সভ্য সমাজ গড়তে চাই। এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’