বাসস
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:১৫

শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড টিকার ৯৭ শতাংশ কভারেজ, বৈশ্বিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ: ইউনিসেফ

ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স জানিয়েছেন, টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ক্যাম্পেইন ২০২৫-এ বাংলাদেশ ৯৭ শতাংশেরও বেশি কভারেজ অর্জন করেছে, যা বিশ্ব নেতৃস্থানীয়দের কাতারে নিয়ে গেছে।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, আমি অত্যন্ত গর্ব ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জানাচ্ছি- বাংলাদেশ অসাধারণ একটি সাফল্য অর্জন করেছে, টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ক্যাম্পেইন ২০২৫-এ ৯৭ শতাংশেরও বেশি কভারেজ সম্পন্ন করেছে, এর ফলে ৪ কোটি ২৫ লাখেরও বেশি শিশু সুরক্ষার আওতায় এসেছে। 

ফ্লাওয়ার্স বলেন, এই অসাধারণ অর্জন বাংলাদেশের সরকারের অঙ্গীকারের প্রমাণ, যা শিশুদের প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ও কষ্ট থেকে রক্ষা করতে এবং পরিবারগুলোকে আর্থিক বোঝা ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্ত রাখতে কাজ করছে।

তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশকে বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে নিয়ে গেছে, বিশ্বে অষ্টম দেশ হিসেবে এই জীবনরক্ষাকারী ক্যাম্পেইন চালু করেছে।

তিনি আরও বলেন, শিশুস্বাস্থ্যের জন্য এই টিকা কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফের যৌথভাবে পরিচালিত সর্বশেষ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস) দেখিয়েছে, বাংলাদেশে মাত্র ৩৯.৩ শতাংশ মানুষের নিরাপদভাবে ব্যবস্থাপিত পানীয় জলের প্রবেশাধিকার রয়েছে। 

এর চেয়েও উদ্বেগজনক হলো- দেশের প্রায় অর্ধেক জলাধার (৪৭ দশমিক ২ শতাংশ) এবং পরিবারের সংগৃহীত পানির নমুনার ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ায় দূষিত। এ পরিসংখ্যান নির্দেশ করে যে লাখ লাখ শিশুর জন্য টাইফয়েডের মতো রোগ দূরবর্তী হুমকি নয়, বরং প্রতিদিনের ঝুঁকি। একটি সাধারণ পানির গ্লাসেও লুকিয়ে থাকতে পারে বড় বিপদ।

এই কারণেই ইউনিসেফ জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারকে ক্যাম্পেইন পরিচালনায় সহায়তা করেছে।

তিনি বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত প্রতিটি পরিবার নিরাপদ ও পরিষ্কার পানির নির্ভরযোগ্য সুযোগ না পায়, ততদিন টিসিভি টিকা শিশুদের গুরুতর অসুস্থতা থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে শক্তিশালী সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে-তাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করবে এবং অভিভাবকদের মনে এনে দেবে স্বস্তি।’

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “টিকা গ্রহণে অভিভাবকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। 

টিকার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার জন্য তিনি অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানান এবং সফল বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সারা দেশে কাজ করা সংশ্লিষ্ট টিমের প্রশংসা করেন।

ইউনিসেফ ৫০ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডোজ টিসিভি সরবরাহ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, কোল্ড চেইন ব্যবস্থাকে নতুন কোল্ড রুমসহ আরও শক্তিশালী করা এবং ভ্যাকসিন যথাসময়ে সঠিক শিশুর কাছে পৌঁছাতে ভ্যাক্সইপিআইয়ের মতো ডিজিটাল টুল ব্যবহারের মাধ্যমে এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করেছে। এছাড়া, বিশাল পরিসরে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা প্রদানেও ইউনিসেফ কাজ করেছে।

যোগাযোগ ও জনসম্পৃক্ততা কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে টিভি, রেডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশু-বান্ধব বার্তা প্রচারের মাধ্যমে ইউনিসেফ ১২ কোটির বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, যা অভিভাবকদের টিকা নিয়ে আস্থা বাড়িয়েছে।

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে- প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি। চরাঞ্চল, উপকূলীয় এলাকা, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, প্রতিবন্ধী শিশু, সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশু, ভাসমান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এবং চা-বাগান শ্রমিকদের সম্প্রদায়ের শিশু, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, এমনকি যৌনকর্মীদের শিশু- কেউই বাদ পড়েনি। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪ লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি শিশুকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে, যা বাংলাদেশের মানবিক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।