বাসস
  ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:০০

ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস আজ 

ছবি : বাসস

রোস্তম আলী মণ্ডল

দিনাজপুর, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): দিনাজপুরে ফুলবাড়ী পাক হানাদারমুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে (৫ ডিসেম্বর) বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদাররা ফুলবাড়ী ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।

ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ ইসলাম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

তিনি জানান, দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় ফুলবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্মরণে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকাল থেকে কোরআন খতম ও বাদ জুম্মা উপজেলার প্রত্যেক মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে যেন কোনো সংঘাত সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি। ২৪ মার্চ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। ২৬ মার্চ দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞের খবরে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সকাল থেকে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী শহরে বের হয় এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল। মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ভাবে রেলস্টেশন থেকে কাঁটাবাড়ী বিহারীপট্টি হয়ে বাজারে ফেরার পথে বিহারীপট্টিতে মিছিলকে লক্ষ্য করে কে বা কারা গুলি বর্ষণ করলে সংঘাতের সৃষ্টি হয়।

২ এপ্রিলের পাক- হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ীতে আক্রমন করে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় বাঙালিদের ওপর দখলদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, হত্যা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুলবাড়ীকে হানাদারমুক্ত করার জন্য ৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে মিত্র বাহিনী বেতদিঘী, কাজিহাল, এলুয়াড়ী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে চর্তুমুখী আক্রমণ চালায়। 

মিত্র বাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ফুলবাড়ী শহরে তাদের প্রবেশ ঠেকাতে ওই দিন রাত ১২টার পর ছোট যমুনা নদীর ওপর লোহার ব্রিজটির পূর্বাংশ শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ব্রিজ ধ্বংসের কারণে মিত্র বাহিনীর ফুলবাড়ী শহরে প্রবেশ করতে দেরি হয়। 

আর এই সুযোগে পাক বাহিনী বিশেষ ট্রেনে করে ফুলবাড়ী থেকে ৫ ডিসেম্বর ভোরে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। 

ট্রেনটি ধ্বংস করতে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি মর্টারশেল নিক্ষেপ করলে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সময় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ২০ নম্বর ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

কিন্তু নানা কারণে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। 

মুক্তিযুদ্ধকালীন জুনিয়র কমান্ডিং অফিসার ও সাবেক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলী সরকার জানিয়েছিলেন, ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ হয়। ৫ ডিসেম্বর ভোরে পরাজয় নিশ্চিত ভেবে হানাদারেরা ফুলবাড়ী ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে ৫ ডিসেম্বরই ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।