শিরোনাম

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চার দিনব্যাপী ‘সিরামিক এক্সপো বাংলাদেশ ২০২৫’ আজ সোমবার শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশসহ ২৫টি দেশের ১৩৫ কোম্পানি ও ৩০০ ব্র্যান্ড রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ সিরামিক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিসিএমইএ)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এ বছরের প্রদর্শনী প্রমাণ করেছে যে দেশের সিরামিক শিল্প দ্রুত রূপান্তরের পথে রয়েছে।
স্থানীয় ও বিদেশি দর্শনার্থীরা এক্সপোতে অংশ নেন। পূর্বে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোকে এ বছরের পুরস্কারগুলো প্রদান করা হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিল্পের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি, ডিজাইন, ট্রেন্ড এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিয়ে বিশেষ সেমিনার ও আলোচনা।
দেশের উদ্যোক্তা, গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা এবং আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে এ এক্সপোতে গভীরভাবে জানার সুযোগ পেয়েছেন।
মেলায় তিনটি সেমিনার, জব ফেয়ার, বি-টু-বি ও বি-টু-সি মিটিং, লাইভ ডেমোনস্ট্রেশন এবং নতুন পণ্য উন্মোচনসহ শিল্পের বৈচিত্র্য ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে।
উদ্যোক্তাদের মতে, ভবিষ্যতের উৎপাদন ব্যবস্থা আরও দ্রুত ও সাশ্রয়ী হবে অটোমেশন, উন্নত ডিজিটাল প্রিন্টিং, রোবটিক হ্যান্ডলিং ও সেন্সর-সমন্বিত পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে। উদ্যোক্তারা বিশ্বাস করেন, এসব প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ শিল্পকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা দেবে।
বর্তমানে দেশে টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যারের ৭০টিরও বেশি কারখানা স্থাপিত হয়েছে, যেখানে বাজারের আকার বাৎসরিক প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। ৫০টিরও বেশি দেশে সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। শিল্পে মোট বিনিয়োগ ১৮ হাজার কোটির বেশি এবং এতে প্রায় ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
শিল্প কর্মকর্তারা বলেন, শুধু সিরামিক পণ্য নয়, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির স্টলগুলোও মেলায় ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতারাও পণ্য দেখে সন্তুষ্ট এবং ইতোমধ্যে এক-দু’টি অর্ডার করেছে।
বিসিএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন সিরামিক খাতে ১৮ হাজার কোটির বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। দেশের ৮৫ শতাংশ টাইলস, ৯২ শতাংশ টেবিলওয়্যার, ৫৯ শতাংশ স্যানিটারি ওয়্যার এবং প্রায় ৯৯ শতাংশ সিরামিক ইটের চাহিদা স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে টেবিলওয়্যার ২৯২ মিলিয়ন, টাইলস ২৩৭ মিলিয়ন, স্যানিটারি ওয়্যার ১৬৩ মিলিয়ন এবং সিরামিক ইট ১ হাজার ৬৪ মিলিয়ন উৎপাদিত হয়েছে। দেশের মোট বাজারের আকার প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। নীতিগত সহায়তা পেলে সিরামিক শিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হতে পারে।
বিসিএমইএ সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বস্ত্র খাতের পরে নীতিগত সহায়তা পেলে সিরামিক দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হতে পারে। আগে এটি সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর ছিল, এখন দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য দেশেই উৎপাদিত হয়।’