বাসস
  ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:০৪

সুনামগঞ্জে বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের ১১০তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণসভা

সুনামগঞ্জে বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের ১১০তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণসভা। ছবি: বাসস

সুনামগঞ্জ, ১০ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের ১১০তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আজ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির বাউল চত্বরে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল পাবেল। 

স্মরণসভায় বক্তব্য দেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ (অব.) শেরগুল আহমেদ, বাউল গবেষক সুবাস উদ্দিন, জেলা বাউল সমিতির সভাপতি তছকির আলী। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, থিয়েটার সুনামগঞ্জের গিয়াস চৌধুরী।

বক্তারা বলেন, বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের ধামাইল গান এই অঞ্চলসহ সারাদেশে সমাদৃত। রাধারমণ দত্তের সৃষ্ট এই জনপ্রিয় ধামাইল গানের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে তারা বলেন, তার গানে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম লীলা, বিরহ, মান-অভিমান এবং অনুরাগ ফুটে উঠেছে। তার গাওয়া অনেক গানের মধ্যে ভ্রমর কইও গিয়া (কইও)/আমারে আসিবার কথা কইয়া (কইয়া) একটি জনপ্রিয় গান।

বক্তারা আরো বলেন, যেমন কৃষ্ণ বিরহের তীব্র আকুতির আকুলতা তাঁর গানের উপজীব্য, অন্যদিকে মানব দেহ ও তার ভেতরের রহস্য এবং সৃষ্টিতত্ত্ব, সেই দেহের মধ্যে স্রষ্টাকে খোঁজার সাধনার কথাও এসেছে তাঁর গানের উপজীব্য হিসেবে। বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্ত আমাদের লোকসংগীত ও সাধনায় যুক্ত করেছেন নতুন রস।

উল্লেখ্য, ধামাইল গানের জনক রাধারমণ দত্ত ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মে সিলেট বিভাগের অন্তর্গত সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

১০ নভেম্বর ১৯১৫ (২৬ কার্তিক ১৩২২ বঙ্গাব্দ) তিনি পরলোকগমন করেন।

কবি রাধারমণ দত্তের পিতার নাম ছিল রাধামাধব দত্ত পুরকায়স্থ এবং মাতার নাম সুবর্ণা দত্ত। তাঁর পিতা রাধামাধব দত্ত ছিলেন, একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত এবং বৈষ্ণব সহজিয়া দর্শনে দীক্ষিত। তিনি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় গ্রন্থ রচনা করেন এবং মহাকবি জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের বাংলা অনুবাদ ও টীকাভাষ্য রচনা করেছিলেন। পারিবারিক পরিমন্ডলেই রাধারমণ দত্ত সাহিত্য ও সঙ্গীত সাধনার সঙ্গে পরিচিত হন। তার এই পরিচিতি পরবর্তীতে সাধনায় পরিনত হয় এবং সঙ্গীতের এক নতুন ধারা যা ধামাইল গান নামে পরিচিত।

মাত্র ৮ বছর বয়সে জীবন শুরুর প্রারম্ভেই হন পিতৃহারা। মায়ের স্নেহের ছায়াতলে শুরু হয় জীবনের পথচলা। স্ত্রী গুণময়ী দেবী ও তিন পুত্র সন্তানের অকালমৃত্যুর যাতনা থেকে মুক্তি পেতে বৈরাগ্যকে জীবনের অবলম্বন করেছিলেন। কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে সৃষ্টি করেন অনেক বিচ্ছেদের গান। নিজ গ্রামের পাশে নলুয়ার হাওরে পর্ণকুঠি তৈরি করে সাধন-ভজনে মগ্ন হন তিনি। এই পর্ণকুঠিরেই চলে তার পরবর্তী ত্রিশ বছরের সাধন ভজন।
আলোচনা সভা শেষে গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।