বাসস
  ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫৮

কর্মজীবী নারীর জন্য সারাদেশে ডে-কেয়ার সেন্টার উদ্যোগ নেবে বিএনপি : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : কর্মক্ষেত্রে সারাদেশে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

তিনি বলেন, ‘নারী যেন পরিবার ও পেশার মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বাধ্য না হন-এমন একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়াই বিএনপির লক্ষ্য।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আজ এক বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, ‘যখন কোনো তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দেন, অথবা কোনো ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, তখন দেশ হারায় সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা এবং অগ্রগতি।’ 

তিনি জানান, শিশু পরিচর্যাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি, যাতে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বাড়ে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান আরও শক্তিশালী হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, পুরুষদের তুলনায় নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘পুরুষদের ৮০ শতাংশ কর্মজীবী, যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ৪৩ শতাংশ। এই ব্যবধান আমাদের সতর্ক করছে যে আমরা জাতির অর্ধেক মেধা ও দক্ষতাকে পিছনে ফেলে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এই কারণেই আমরা সারাদেশে এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছি, যাতে শিশু পরিচর্যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হয়।’ 

বিএনপির পরিকল্পনায় রয়েছে-সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, সরকারি অফিসগুলোতে ধাপে ধাপে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ, বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে-কেয়ার ব্যবস্থা, যেসব নিয়োগকর্তা শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে তাদের জন্য কর সুবিধা ও সিএসআর ক্রেডিট প্রদান এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রদান।

তিনি বলেন, এই একটি সংস্কার নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে, পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করতে পারে, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা দিতে পারে এবং দেশের জিডিপিতে ১ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করতে পারে। যেহেতু তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী, তাই কর্মজীবী মায়েদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর গবেষণা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, যেসব কারখানায় শিশু পরিচর্যার সুবিধা রয়েছে, সেখানে কর্মী ধরে রাখার হার বেশি, অনুপস্থিতি কম এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরের মধ্যেই খরচ তুলে আনতে পারে।

তারেক রহমান বলেন, ‘শিশু পরিচর্যা কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, এটি সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অপরিহার্য অংশ। সড়ক যেমন বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবনে সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে।’

তিনি আরও বলেন, বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট-২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ‘আমরা এমন এক বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারী, গর্বের সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে’। 

বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা এমন যে কোনো পশ্চাৎমুখী ধারণা প্রত্যাখ্যান করি যা নারীর সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে। শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শুধু ন্যায়সংগত নয়; এটিই বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থনীতি।’

তিনি সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ি, যেখানে প্রতিটি কর্মজীবী মা ও প্রতিটি ছাত্রী নিজের সাফল্যের স্বাধীনতা পায় এবং যেখানে সমাজের যত্ন ও সহযোগিতাকে অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।’