বাসস
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:২৬
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৩১

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে শীতের তীব্রতায় চরম দুর্ভোগে জনজীবন

ফাইল ছবি

মুহাম্মদ আমিনুল হক

সুনামগঞ্জ, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার হাওরাঞ্চলে শীতের তীব্রতায় চরম দুর্ভোগে জনজীবন। জেলার পাশেই রয়েছে মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়। চারদিকে পাহাড় ও হাওরের বেষ্টনী। যার কারণে শীত মৌসুমে এ হাওরাঞ্চলে শীতের প্রভাব বেশিই থাকে। 

গত তিন দিন ধরে সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে শীতের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হচ্ছে। মৃদু শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় পুরো জেলা ঢেকে গেছে। গত ৩ দিনে সূর্যের দেখা মেলেনি। এই ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন হাওরপাড়ের মানুষ। কনকনে শীতে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বোরো জমি আবাদে হিমশীম খাচ্ছেন কৃষকেরা। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। হাওরাঞ্চলে শিশু ও প্রবীণরা ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায় ভূগছেন। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

ছাতক উপজেলার হাবিবুল্লা জানান, হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত জনজীবন। এই অঞ্চলে গত এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা, দিনভর পথঘাট ঢেকে থাকছে সাদা চাদরে। যে কারণে সড়ক-মহাসড়ক, হাটবাজারে জনসমাগম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজে বের হতে না পেরে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়াও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুসহ প্রবীণেরা।

দোয়ারাবাজার উপজেলার সুহেল আলম জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে শীত খুব বেশি। কুয়াশার কারণে আকাশে সূর্য দেখা যায় না। ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশা স্বাভাবিক জনজীবনেও প্রভাব ফেলেছে। যতই সময় বাড়ছে শীতের তীব্রতাও বাড়ছে।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সবনম দোজা বলেন, আমরা প্রতিদিন ভোরবেলা স্যারের কাছে বিশেষ ক্লাসের জন্য পড়তে যাই, কিন্তু আজ তিন দিন ধরে ঠান্ডা ও ঘণকুয়াশার কারণে স্যারের কাছে বিশেষক্লাসে যেতে পারছিনা। এতে কিছুটা হলেও আমাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে।

শহরের হাছননগরের বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, সুনামগঞ্জে যে পরিমান শীত, আমি আমার ছেলেকে ভোর বেলা মাদ্রাসায় কোরআন শেখানোর জন্য নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছি। যার কারণে এই সপ্তাহে তাকে ছুটি দিয়েছেন তার শিক্ষক। 

সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাহবুবুর রহমান বাসসকে জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেশি। জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তারপরও আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

তীব্র শীত মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে হাওরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের রাত কাটছে নির্ঘুম। অনেকেই শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে কাঠ ও খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন। সীমান্তবর্তী এলাকার গুদিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুবুল হাসান জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এইবার শীত বেশি। তাই আবহাওয়ার কারণে খেটে খাওয়া অনেক মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা রাজু আহমেদ জানান, হাওরপাড়ের বাসিন্দারা তীব্র শীতের কারণে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি হাওরে মাছ ও পশু-পাখি শীতের কারণে কাবু হয়ে পড়েছে। গৌরারং গ্রামের সমিরন দাস জানান, ঘন কুয়াশায় কারণে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে। আজ বুধবার শহরের রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভোরে কাজে বের হওয়া দিনমজুর, রিকশাচালক ও নির্মাণশ্রমিকেরা শীতের কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন। শহরের ইকবালনগরের রিকশাচালক আলমগীর হোসেন বলেন, শীতের প্রকোপ বেড়েছে। তীব্র ঠান্ডায় রিকশা চালাতে পারি না। ঠান্ডা বাতাসও কষ্ট দিচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের উপ সহকারী আবহাওয়াবিদ রুদ্র তালুকদার বাসসকে জানান, সুনামগঞ্জের তাপমাত্রা আজ ১৯ ডিগ্রী। এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে।

পাশাপাশি আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এদিকে, সারাদেশে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাতে শীত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া দেশের কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে বলেও সংস্থাটি আভাস দিয়েছে। সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।