শিরোনাম

রেজাউল করিম মানিক
রংপুর, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ( বাসস):উত্তরের দুই কোটি মানুষের দুঃখ তিস্তা। বন্যার আর খরায় তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আর তাই তিস্তা বাঁচাতে ফুসে উঠেছে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষ।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। কর্মসূচি অনুযায়ী ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার সর্বস্তরের মানুষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার, ক্রেতা-বিক্রেতা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকসহ অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী যে যেখানে থাকবে, বেলা ১১টায় সেখানেই নিজ নিজ কাজ বন্ধ রেখে ১৫ মিনিট নিরবে দাঁড়িয়ে থাকবে।
যানবাহন চালকেরাও-মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ট্রাক, বাস কিংবা ট্রেন-ওই সময় গাড়ি থামিয়ে ১৫ মিনিট অবস্থান করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ক্লাস গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন এবং শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে ১৫ মিনিটের জন্য সব ধরনের কাজ বন্ধ রেখে তিস্তা নদীর অস্তিত্ব রক্ষার ঐতিহাসিক এ কর্মসূচিতে সংহতি জানানোর জন্য।
এ প্রসঙ্গে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকার যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগামী নভেম্বর মাসে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে, তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অচল করে দেওয়া হবে গোটা উত্তর অঞ্চল।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরাঞ্চলের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তিস্তা নদী শুধু একটি নদী নয়, এটি আমাদের জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতির প্রতীক। এই নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এর পানির প্রবাহ ও পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে। আগামী ৩০ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি, যা তিস্তাপাড়ের মানুষের ন্যায্য অধিকারের প্রতীক হিসেবে পালিত হবে। এই ১৫ মিনিটের নিরবতা হবে তিস্তাবাসীর সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি, যার মাধ্যমে জানানো হবে-‘তিস্তা বাঁচলে উত্তরবঙ্গ বাঁচবে, তিস্তা বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।’ এর আগে, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। চলতি বছরের গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তার তীরে ১১টি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন লাখো মানুষ।
গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয় এবং ৯ অক্টোবর উপজেলা শহরগুলোতে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, গত ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় তিস্তা নদীর উভয় তীরে ১৩০ কিলোমিটার জুড়ে একযোগে মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেন তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষ। এই কর্মসূচিতেও লাখ লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। মশাল হাতে অংশগ্রহণকারীরা একযোগে স্লোগান দেন ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’, ‘তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই’, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ বাস্তবায়ন চাই’। এ আন্দোলন ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
তিস্তাপাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, যদি তিস্তা খনন করা হয়,মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে উত্তরের জীবনরেখা পাল্টে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ লাভ করবে এই অঞ্চল। তাই জরুরি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চান তারা।