শিরোনাম
ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে পথ হারানো সাত শিক্ষার্থীর উদ্ধারের ঘটনাকে বিকৃত করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।
ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, ফেসবুকে এই শিক্ষার্থীদের ছবি ব্যবহার করে দাবি করা হচ্ছে— ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসলে ওই শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার নয় বরং উদ্ধার করা হয়েছে।
আসল ঘটনা হলো চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে সাত শিক্ষার্থী হারিয়ে যায়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করে।
ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো যাচাইয়ের জন্য প্রথমে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। এতে চট্টগ্রামভিত্তিক দৈনিক আজাদী পত্রিকার ফেইসবুক পেইজে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যার একটি দৃশ্য আলোচিত ছবিটির সঙ্গে মিলে যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘বাঁশখালীতে পার্কে ঘুরতে গিয়ে রাত্রি যাপন ৭ শিক্ষার্থীর, পরের দিন উদ্ধার।’
এরপর প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করলে কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে পাওয়া যায় উদ্ধার হওয়া শিশুদের পরিচয়। তারা হলেন- আবরার উদ্দীন ইশরাক (১১), মাহাতাফ মঞ্জুর চৌধুরী (১১), কৃতশিক দাশ স্বপ্নীল (১২), মোহাম্মদ জিনান (১১), মোহাম্মদ বিন মাহমুদ (১১), আকতার (১২) ও মো. সাইদ (১২)। এই রিপোর্টে প্রকাশিত ছবির সঙ্গেও ফেসবুকে ছড়ানো ছবির মিল রয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু গণমাধ্যমকে জানান, নির্ধারিত সময়ে বাড়ি না ফেরায় অভিভাবকেরা পুলিশে খবর দেন। এরপর বাঁশখালী থানা পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনুসন্ধান শুরু করে। ফুটেজে দেখা যায়, ২৬ সেপ্টেম্বর এই সাত শিশু মিয়ার বাজার এলাকা থেকে ইজিবাইকে করে উত্তর দিকে যায়। এরপর আর তাদের দেখা যায়নি। তারা পাহাড়ি এলাকায় গেছে ধারণা করে পুলিশ উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে ডাকভাঙা পাহাড় থেকে সাত শিশুকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনাটি সম্পর্কে দৈনিক ইত্তেফাক উদ্ধার হওয়া এক শিশুর বরাত দিয়ে লিখেছে, ‘সন্ধ্যা নেমে এলে আমরা বুঝতে পারি পথ হারিয়েছি। তাই রাতে আর পাহাড়ি পথে হাঁটিনি। একটা বটগাছের নিচে ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা করেছি। ভোর হলে হাঁটা শুরু করেই পুলিশের দেখা পাই। তারা আমাদের উদ্ধার করে।’
ফ্যাক্টওয়াচ বলেছে, এসব তথ্য-প্রমাণ স্পষ্ট করে যে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়নি বরং পথ হারিয়ে তারা পাহাড়ে রাত কাটায় এবং পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ফলে ফেসবুকে প্রচারিত দাবিগুলো মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।
বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্বে কাজ করে ফ্যাক্টওয়াচ। এটি একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান, যা লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এবং সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটিভেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) দ্বারা পরিচালিত।