বাসস
  ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৪৩
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২৪

লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ইডিসিএল: এমডি সামাদ মৃধা

ইডিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা। ছবি : বাসস

।। বরুন কুমার দাশ।।

ঢাকা, ৬ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): বিগত সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত ইডিসিএলে ইতোমধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। অদূর ভবিষ্যতে দেশের সরকারি ওষুধের চাহিদার পুরোটাই উৎপাদন ও সরবরাহ করতে সক্ষম হবে এই প্রতিষ্ঠানটি। 

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা আজ সোমবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই আশার কথা জানান। 

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ওষুধ খাতে এক সময়ের স্থবির প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড আজ সফলতার পথে। ইতোমধ্যে ইডিসিএল লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দক্ষ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছ ক্রয়নীতি ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। দেশীয় ওষুধ খাতের এই রূপান্তর এখন নতুন করে-আশার আলো দেখাচ্ছে। ইডিসিএল হয়ে উঠছে সুশাসনের উদাহরণ। মাত্র প্রায় এক বছরে চোখে পড়ার মতো সাফল্য অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি, ওভারটাইম ব্যয় হ্রাস, অদক্ষ জনবল কমানো ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এখন নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলছে।’ 

সামাদ মৃধা বলেন, ‘দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইডিসিএল ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে, কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয়।’

কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি ও উৎপাদনে গতির বিষয়ে ইডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘ইডিসিএলের উৎপাদন যন্ত্র এখন প্রতিদিন ৩০ মিনিট বেশি সময় চালানো হচ্ছে। এতে দৈনিক ১ হাজার ২৬১ কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মাধ্যমে বছরে মোট ৩ লাখ ১০ হাজার ২০৬ কর্মঘণ্টা বেশি কাজ সম্ভব হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এই বাড়তি দক্ষতা বছরে প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকা সাশ্রয় এনে দিয়েছে। ফলে প্রতিদিনের কাজ নির্ধারিত অফিস সময়ের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হচ্ছে।’  

ওভারটাইম ব্যয় কমেছে জানিয়ে সামাদ মৃধা বলেন, ‘ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসায় পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ওভারটাইমে ৪ কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার ২৮৩ টাকা কম খরচ হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি ও সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনার কারণে।’

তিনি বলেন, ‘আগে রাতে কাজ শেষ হতো, এখন সময়মতো সব কাজ সম্পন্ন হয়। কাজের প্রতি সবাই আরও দায়িত্বশীল হয়েছে। এছাড়া, অতিরিক্ত ও অদক্ষ ৭২২ জন কর্মী কমানো হলেও উৎপাদন বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওষুধ উৎপাদন বেড়েছে ৫৯ কোটি টাকার, আর বেতন বাবদ সাশ্রয় হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। ফলে কোম্পানিটি আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে এসে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে।’

টোল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে সাশ্রয়ের বিষয়ে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে টোল ম্যানুফ্যাকচারিং আগের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে নামানো হয়েছে। আগে ৩৩টি আইটেমের ওষুধ বাইরের কারখানায় উৎপাদন করা হতো, এখন করা হচ্ছে ১২টি আইটেম। এর ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সাশ্রয় হয়েছে। ধীরে ধীরে নিজেদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে পুরোপুরি টোল ম্যানুফ্যাকচারিং বন্ধ করা হবে।’

ইডিসিএলের গোপালগঞ্জ প্রকল্প সম্পর্কে সামাদ মৃধা বলেন, গোপালগঞ্জ শাখায় ইতোমধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও খাবার স্যালাইন উৎপাদন ট্রায়াল চলছে। পাশাপাশি আইভি ফ্লুইড (৫০০ ও ১০০০ মি.লি.) উৎপাদনের জন্যও মেশিন ট্রায়াল চলছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে দেশে স্যালাইন সরবরাহে বড় পরিবর্তন আসবে।

ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,  ‘ইডিসিএলের ক্রয় প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় টেন্ডারে এখন বেশি দরদাতা অংশ নিচ্ছেন। এতে প্রতিযোগিতামূলক দামে কাঁচামাল ক্রয় করা যাচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে ২৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৭ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। আগে দরদাতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতেন। এখন প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত হওয়ায় ভালো উৎস থেকে কম দামে কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে।’

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে ভ্যাকসিন প্রকল্পে অগ্রগতির বিষয়ে ইডিসিএলের এমডি জানান, সিরাজদীখানে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ইডিসিএলের নতুন টিকা উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে, যা ২০২৭ সালের মধ্যে চালু হবে। এটি চালু হলে দেশে ভ্যাকসিনের চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া একই এলাকায় এফডিএ গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ উৎপাদন সম্ভব হবে।’

গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসের (জিএমপি) মানোন্নয়ন ও নতুন ভবন নির্মাণ বিষয়ে সামাদ মৃধা বলেন, ইডিসিএলের ঢাকা ফ্যাক্টরির পাশে ৬৭ দশমিক ১০৯ ডেসিমেল জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণাধীন। এতে জিএমপি মানোন্নয়ন ছাড়াও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে এবং ভাড়াকৃত গুদামের খরচ বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

কর্মীদের মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের উৎপাদনমুখী করা হয়েছে। আগে যেখানে অনেক শ্রমিক কর্মবিমুখ ছিলেন, এখন তারা সময়মতো দায়িত্ব পালন করছেন। এতে কাজের গতি ও মান বেড়েছে।’

প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-সংক্রান্ত নজরদারি জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা বলেন, স্থানীয় ও আমদানি উভয়ক্ষেত্রেই মোড়ক, কাঁচামাল, প্রকৌশল সামগ্রী ক্রয়, স্টেশনারি ও অন্যান্য ক্রয়, ডাইনিং-সংক্রান্ত ব্যয়সহ সার্বিক খরচের হার ইতোমধ্যে মধ্যে কমিয়ে আনা হয়েছে। ঢাকা, খুলনা ও বগুড়া প্রকল্পের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে সরকারের ওষুধের চাহিদা পরিপূর্ণভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে।