বাসস
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:২৯

হাসিনা, জয় ও পুতুলের দুর্নীতির পৃথক ৩ মামলায় ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ 

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: কোলাজ

ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা সরকারি জমি বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক তিন মামলায় ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

আজ (মঙ্গলবার) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে দুই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট নয়জন। এ নিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর তিন মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৫৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ দিয়েছে।

শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মটর ক্লিনার মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মুদ্রাক্ষরিক কামরুন্নাহার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ও কম্পিউটার অপারেটর মুক্তি তরফদার এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ।

শেখ হাসিনা ও জয়সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে করা আরেক মামলায় সাক্ষী ছিলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তৈয়বা রহিম, গাজীপুর সদর রেকর্ড রুমের সাব রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান এবং ঢাকার সাবেক মেট্রোপলিটনের ম্যাজিস্ট্রেট এম মেজবাহউর রহমান।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ আলী বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে গত ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আটজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। 

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। মামলায় সাক্ষী করা হয় ২৩ জনকে। এর মধ্যে ২১ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলায় অপর আসামিরা হলেন: জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউক-এর সাবেক সদস্য শফি উল হক, খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

অপরদিকে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সজীব ওয়াজেদ জয় ও শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। 

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরও দুইজনসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস এম রাশেদুল হাসান। মামলায় সাক্ষী করা হয় ২১ জনকে। ইতোমধ্যে ২০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ও জয় ছাড়াও এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন: জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার, রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

এছাড়াও, রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদি হয়ে শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে তৃতীয় মামলাটি করেন। 

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১৬ জনকে, এর মধ্যে ১৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মামলার অপর ১৬ আসামি হলেন: জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউক-এর সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, তদন্ত প্রাপ্তে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।