বাসস
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:১৭

খেলনা শিল্প জোরদার করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান

ছবি : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বিশেষজ্ঞরা আজ এক আলোচনায় দেশের খেলনা শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছেন।

তারা বলেন, প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাব, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক হার, বন্ডেড সুবিধার অনুপস্থিতি, অপ্রতুল অবকাঠামো, টেস্টিং সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে এ শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণ: খেলনা উৎপাদন শিল্পে উদ্ভাবন, রপ্তানির সম্ভাবনা ও বাজার সম্প্রসারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সদস্য (কাস্টমস: নীতি ও আইসিটি) মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর এবং বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের উপর নজর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সহজীকরণ ও বন্ডেড সুবিধা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে প্রণীত ট্যারিফ নীতিমালা অনুসারে রাজস্ব বিভাগ শুল্ক আরোপ করে থাকে এবং এক্ষেত্রে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কিছু সুপারিশ রয়েছে যা মেনে চলতে হয়। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে কোন নীতি সহায়তা পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই। তবে, আগামী বছরে বাজেট প্রণয়নকালে এখাতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরকারের বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। 

এনবিআর সদস্য আরো বলেন, গত ৪০ বছর ধরে তৈরি পোষাক খাতে সহায়তা দেওয়া হলেও এখাতের সক্ষমতা কতটুকু বেড়েছে তা নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। তাই খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রাপ্তির চাইতে নিজেদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং পণ্যের উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বেশি মনোযোগী হওয়ার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত খেলনা পণ্য রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং ব্রিটিশ সরকার এখাতে সহযোগিতা করতে বেশ আগ্রহী। 

বিদ্যমান নীতিমালার সংস্কার ও প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা সম্ভব হলে ব্রিটেনে এখাতের পণ্যের রপ্তানি আরো বহুগুণ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

তিনি জানান, ব্রিটিশ সরকার সম্প্রতি রুলস অব অরিজিনের শর্তাবলি সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তাঁর দেশে পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, এনবিআর শিল্পখাতের কাঁচামালের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা নিরসন করেছে যা বাংলাদেশের সামিগ্রক রপ্তানি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক খেলনা শিল্পের বাজার ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হলেও বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৭৭ মিলিয়ন। 

তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাব, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক হার, বন্ডেড সুবিধার অনুপস্থিতি, অপ্রতুল অবকাঠামো, টেস্টিং সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে এ শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এ খাতের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য উদ্ভাবনী কার্যক্রমে শিক্ষা খাতের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাড়ানোর উপর তিনি জোর দেন।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং জালালাবাদ পলিমারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, প্লাস্টিক খাতে বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজারের মত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি খেলনা সামগ্রী উৎপাদনের সাথে জড়িত এবং এখাতে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। 

তিনি জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলনা সামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৮টি দেশে রপ্তানির মাধ্যমে তা ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। 

তবে পণ্যের মান নিশ্চিতকরণ, অপ্রতুল অবকাঠমো, গবেষণা কার্যক্রমের অনুপস্থিতি এবং নতুন পণ্যের ডিজাইন উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকা প্রভৃতি বিষয়সমূহের কারণে এখাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে শামীম আহমেদ অভিমত প্রকাশ করেন। 

এখাতের সার্বিক উন্নয়নে ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট, পণ্য উদ্ভাবন কাজে মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, জয়েন্ট ভেঞ্চার বিনিয়োগকে উৎসাহিত করণ, অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, প্লাস্টিক খাতের উন্নয়ন নীতিমালার মধ্যেই খেলনা সামগ্রী শিল্পের নীতিমালা প্রণয়ন, পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির উপর সম্পূরক শুল্ক হ্রাসের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।