বাসস
  ২০ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৪

দ্রুত ও কার্যকর নদী সংস্কার চান তিস্তার ভাঙন কবলিত  মানুষ

তিস্তা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছবি :বাসস

\ শফিকুল ইসলাম বেবু \

কুড়িগ্রাম, ২০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): জেলার উলিপুরে তিস্তা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ও শত শত একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটে মাটি হারিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে হাজারো পরিবার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শত শত একর ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে তিস্তা পারের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

তিস্তার ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে তাদের বসতভিটা, ফসলি জমি, গবাদি পশু সব হারিয়ে নিঃস্ব তারা। কোনোদিন তিন বেলা খাবারও জুটছে না তাদের। তবুও সাহায্য নয়, নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ চান তারা।

জানা যায়, উপজেলার থেতরাই, বজরা, গুনাইগাছ ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এই চারটি ইউনিয়নের  নদী উপকূলবর্তী পশ্চিম বজরা, পাকার মাথা, উত্তর সাদুয়া দামার হাট, খামার দামার হাট পশ্চিম পাড়া, সাতালস্কর, চর বজরা, সন্তোষ অভিরাম, কাজির চক, টিটমা, ঠুটাপাইকার, কর্পুরা, চাপরার পাড়, রেডক্রস, লাল মসজিদ ও অর্জুন নামক এলাকায় তিস্তার তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা নদীর ভাঙনে নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় বসত ভিটে ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবারের লোকজন মাথা গোজার জন্য অন্যের জমিতে ঘর তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকেই আবার নিজেদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। 

থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা নদীতে বসত ভিটে হারিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকা মজিবর রহমান (৫০), আইয়ুব আলী (৬৫), তৈয়ব আলী (৫২), মর্জিনা বেগম (৩২) ও সাজিনা বেগম (৪৬) সহ আরও অনেকে জানান, নদীর ভাঙনে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। শত শত একর আবাদি জমি বাড়ি-ঘর ও ভিটে সব নদীতে চলে গেছে। 
তারা বলেন, তিস্তা নদী আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের চলার মত আর কিছুই থাকলো না।  

ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ (৪৫), মহুবর মিয়া (৫৫), শফিকুল (৪৬), বাবলু (৬২), আছিয়া বেওয়া (৪৩) ও মোকছেদুল (৫৮) বাসসকে বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনে আমরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি। তবুও আমরা সাহায্য চাইনা, আমরা চাই নদী সংস্কার। নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানান তারা।

উপজেলার চর গোড়াই পিয়ার এলাকার দবির উদ্দিন (৬৭) বলেন, ‘স্থানীয় চর গোড়াই পিয়ার জামে মসজিদের মোয়াজ্জিনি ও কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। গত কয়েক বছরে আমার বাড়ি ১৫ বার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে এ চরে অবস্থান নেই। সম্প্রতি তিস্তার ভাঙনে মসজিদসহ আমার বাড়ি আবারো নদী গর্ভে চলে যায়।  কয়েক দিন হয়ে গেলো ঠিকভাবে পেটভরে খেতে পাইনা।’

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজিজার রহমান বলেন, গত কয়েকদিনের ভাঙনে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ও শত শত একর আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে চর গোড়াই পিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাম নিয়াসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুয়ান সতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪ টি মসজিদ, ৪ টি নুরানি মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার বসত বাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা জানান, ভাঙন কবলিত এলাকার জন প্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে। 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা নদীতে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় নদী শাসনের জন্য আরও বিপুল পরিমাণ জিও ব্যাগ ফেলার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে ভাঙন রোধে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।