বাসস
  ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৪২

চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল ফেরত স্ক্র্যাপ কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত

ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ১০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ব্রাজিল থেকে চারটি আন্তর্জাতিক বন্দর ঘুরে আসা স্ক্র্যাপবাহী একটি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের ‘মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ রেডিয়েশন ডিটেকটিভ সিস্টেম’ (এমপিআরডিএস) এ সংকেত ধরা পড়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে কনটেইনারটির খালাস স্থগিত করে আলাদা স্থানে সরিয়ে রেখেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কনটেইনারটিতে পুরোনো লোহার টুকরা (স্ক্র্যাপ) ছিল। রেডিয়েশন শনাক্তকরণ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় কনটেইনারে তিনটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ শনাক্ত হয় : থোরিয়াম-২৩২, রেডিয়াম-২২৬ ও ইরিডিয়াম-১৯২। প্রাথমিক পরীক্ষায় বিকিরণের মাত্রা পাওয়া গেছে ১ মাইক্রোসিয়েভার্টস। যদিও এটিকে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা হিসেবে গণ্য করা হয় না, তারপরও লোহা ও কনটেইনারের কারণে প্রকৃত মাত্রা নির্ণয় কঠিন হওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কনটেইনারটি আলাদা রাখা হয়েছে।

রোববার (১০ আগস্ট) চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান বলেন, সতর্কসংকেত পাওয়ার পর আমরা কনটেইনারটি খালাস স্থগিত করেছি এবং আলাদা স্থানে রেখেছি। এখন পরমাণু শক্তি কমিশনকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এসে সরেজমিন পরীক্ষা করবেন।

এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, ঢাকার ডেমরার আল আকসা স্টিল মিলস লিমিটেড ব্রাজিল থেকে পাঁচটি কনটেইনারে ১৩৫ টন স্ক্র্যাপ আমদানি করে। তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হওয়া কনটেইনারটি সেগুলোর একটি। গত ৩ আগস্ট ‘এমভি মাউন্ট ক্যামেরন’ নামের একটি জাহাজ থেকে এটি চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে নামানো হয়। ৭ আগস্ট বন্দরের ৪ নম্বর গেট দিয়ে খালাস নেওয়ার সময় ‘মেগাপোর্ট’ যন্ত্রে তেজস্ক্রিয়তার সংকেত ধরা পড়ে।

সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক শিপিং কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির (এমএসসি) ট্র্যাকিং অনুযায়ী, কনটেইনারটি ব্রাজিলের মানাউস শহর থেকে ৩০ মার্চ পাঠানো হয়। এরপর কনটেইনারটি পানামার ক্রিস্টোবাল বন্দর (১৮ এপ্রিল), নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম (৩ মে) এবং শ্রীলঙ্কার কলম্বো (১৫ জুলাই) বন্দরে অবস্থান করে। কলম্বো থেকে ২৮ জুলাই এটি ‘মাউন্ট ক্যামরন’ জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ৩ আগস্ট এটি বন্দরে পৌঁছায়।

এই চার বন্দরের মধ্যে তিনটি বন্দরে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্র থাকলেও সেগুলোতে কনটেইনারটি শনাক্ত হয়নি। ফলে সেটি বাধাহীনভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ২০১১ সালে স্থাপিত চট্টগ্রাম বন্দরের রেডিয়েশন ডিটেকশন সিস্টেমে এটি শনাক্ত হয়।

এটি মানাউস বন্দর থেকে আসা প্রথম তেজস্ক্রিয় স্ক্র্যাপ নয়। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, মানাউস থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে পাঠানো একটি কনটেইনার মাল্টা বন্দরে জাহাজ পরিবর্তনের সময় তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়। তখন কনটেইনারটি ফেরত পাঠিয়ে ২০২২ সালের ২৩ জুন ব্রাজিলের সুয়াপে বন্দরে নেওয়া হয়। 

পরে ব্রাজিলের ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার এনার্জি কমিশনের বিজ্ঞানীরা কনটেইনার থেকে তেজস্ক্রিয় উপাদান আলাদা করে সংরক্ষণাগারে স্থানান্তর করেন।

সেখানে রেডিয়াম-২২৬ শনাক্ত হয়েছিল। এ তথ্য ব্রাজিলিয়ান জার্নাল অব রেডিয়েশন সায়েন্সেস (বিজিয়ারএএস) এর একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে। গেল ১৫ জুলাই এই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশে প্রথমবার তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয় ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতে রপ্তানির পথে একটি মরিচারোধী ইস্পাতবাহী কনটেইনারে কলম্বো বন্দরে তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়ে। পরে সেটি ফেরত এনে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে ‘রেডিয়াম বেরিলিয়াম’ তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত করেন, যার বিকিরণের মাত্রা ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১২ হাজার মাইক্রোসিয়েভার্টস।