বাসস
  ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৬:০৬

বিয়াম বিস্ফোরণ : পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ২

ঢাকা, ২৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীর হাতিরঝিলে বিয়াম ফাউন্ডেশনের ৫ম তলায় এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

ঘটনায় জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম (৩৮) ও তার ভাড়াটে সহযোগী মো. আশরাফুল ইসলামকে (৩৬) গ্রেফতার করেছে পিবিআই-এর স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন ইউনিট (এসআইএন্ডও-উত্তর)।

পিবিআই’র একাধিক বিশেষায়িত দল তথ্যপ্রযুক্তি, সিসিটিভি ফুটেজ ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষণের মাধ্যমে দুই আসামিকে শনাক্ত করে। পরে গত ২৫ জুলাই কুড়িগ্রাম ও ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পিবিআই’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির বিয়াম ভবনের ৫০৪ নম্বর কক্ষে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। 

এতে অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং সমিতির সেক্রেটারির গাড়িচালক মো. ফারুক গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। 

বিস্ফোরণে কক্ষে থাকা গুরুত্বপূর্ণ দলিল, নামজারির কাগজপত্র, ব্যাংকের চেকবই ও আসবাবপত্র সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায়।

ঘটনার পর বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সচিব মো. মশিউর রহমান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

তদন্তের শুরুতে থানা পুলিশ কাজ শুরু করলেও, পরে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ৬ মে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই’র এসআইএন্ডও (উত্তর) ইউনিট।

পিবিআই’র তদন্তে উঠে আসে, বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম পরিকল্পিতভাবে সমিতির মূল নথিপত্র ধ্বংসের উদ্দেশ্যে বিস্ফোরণের ছক তৈরি করেন। এই কাজে তিনি আশরাফুলসহ নিহত মালেক ও ফারুককে সম্পৃক্ত করেন এবং কাজ শেষে তাদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেন।

ঘটনার রাতে আশরাফুল মাস্ক, গ্লাভস ও মাস্কিং ক্যাপ পরে ভবনের ৫ম তলায় গিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করেন। পরে অফিস সহায়ক মালেক ও ড্রাইভার ফারুক ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে আগুন লাগিয়ে দেন। 

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে একজন ঘটনাস্থলে ও আরেকজন হাসপাতালে মারা যান।
গ্রেফতারকৃত দুজন আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে, তারা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবদুর রহমান বাসসকে জানান, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মামলার মূল পরিকল্পনাকারীসহ জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। মামলার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে এবং অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কি-না, তা গভীরভাবে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’