বাসস
  ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৭:০১

শিবসা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুটি চালু হলে উপকৃত হবে পাঁচ লাখ মানুষ

শিবসা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতু। ছবি : বাসস

এস এম জাহিদ হোসেন

খুলনা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় শিবসা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি চালু হলে অন্তত পাঁচটি উপজেলার পাঁচ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি খুলনা শহরের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জানিয়েছে, পাইকগাছায় ‘রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ (আরসিআইপি)-এর আওতায় সেতুটি নির্মিত হচ্ছে।

৭৪৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৮ মিটার চওড়া এই সেতু নির্মিত হচ্ছে পাইকগাছা জিসি-লস্কর বাজার-বাইনতলা-বগুড়ারচক-শুড়িখালী-ভান্ডারপোল-গিলাবাড়ি জিসি সড়কের চেইনেজ ২ হাজার ৩০০ মিটার স্থানে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই)। ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে ৬৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সেতুটি চালু হলে পাইকগাছাসহ কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সঙ্গে খুলনার যোগাযোগ আরও দ্রুত ও সহজ হবে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এটি এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন গতি আনবে।

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসা বা জরুরি প্রয়োজনে খুলনায় যেতে অনেক সময় লাগে। সেতুটি আমাদের দুর্ভোগ লাঘব করবে এবং সময় বাঁচাবে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী সোলাইমান গাজী বলেন, ‘কাজ দ্রুত আগাচ্ছে। এ গতি বজায় থাকলে সেতু নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে। যোগাযোগ সহজ হলে আমাদের মাছ চাষ ব্যবসাতেও লাভ হবে।’

পাইকগাছার আরেক ব্যবসায়ী শাহীন গোলদার বলেন, ‘প্রতিদিন নদী পার হতে হয়। জোয়ারের সময় সমস্যা না হলেও ভাটার সময় চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ে। সেতুটি আমাদের এই ভোগান্তির অবসান ঘটাবে। পাইকগাছা শহরে যাতায়াতও সহজ হবে, ওখানেই আমাদের বেশিরভাগ ব্যবসা হয়।’

লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাসস’কে বলেন, কারুলিয়া অংশে নির্মাণাধীন সেতুটি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনবে।’

প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক সহকারী প্রকৌশলী সজল বিশ্বাস বলেন, ‘সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আশা করি ২০২৬ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।’

তিনি জানান, সেতুর শেষ প্রান্তে গড়ইখালি, খাসিয়াল, কয়রা ও বরদাল-আশাশুনি এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে একটি রাউন্ডআবাউট নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাহেব আলী বলেন, এখন পর্যন্ত ৬৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং অগ্রগতি সন্তোষজনক। আগামী বছরের মাঝামাঝি কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।

তিনি জানান, সেতুর দুই পাশে তিন একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র খুলনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে এবং জুন মাসে পরিদর্শনও সম্পন্ন হয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলী শাফিন শোয়েব বলেন, ‘২৪০টি পাইলের মধ্যে ২২৭টি শেষ হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে প্রায় এক কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩২ ফুট। আশা করছি আগামী বছরের শেষ নাগাদ পুরো কাজ শেষ হবে।’

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, ‘সেতুটি চালু হলে শুধু পাইকগাছা নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ উপকৃত হবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।’