শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ জুন, ২০২৫ (বাসস) : আটচল্লিশ বছর বয়সী জোবেদা খানম খুবই ব্যস্ত দিন পার করছেন তার খামারে। তাকে কাজে সহযোগিতা করছেন তার স্বামী আর দুই সন্তান। এছাড়াও তার খামারে কাজ করেন গ্রামের আরো ১৫ জন, যার মধ্যে দশ জনই নারী। বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার চকরিয়া উপজেলার বিলছড়ি গ্রামে। অথচ বছর তিনেক আগে ভালো করে দু’বেলা খাবার জুটতো না জোবেদা খানম আর তার পরিবারের। মূলত এক এনজিও আপাই তার ভাগ্য বদলে দিয়েছেন।
জোবেদা বলেন, সেই আপা প্রায় সময়ই গ্রামে আসতেন। যাদের বাড়িতে বাচ্চা রয়েছে তাদেরকে টিকা সম্পর্কে পরামর্শ দিতেন। এছাড়াও গ্রামের নারীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরামর্শ দিতেন। আমার বাড়িতেও আসতেন। আমার রিকশা চালক স্বামীর আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলত না। আর সব দিনতো রিকশা নিয়ে বের হতে পারত না। একদিন তিনি (আপা) আমার দুঃখের কথা শুনে আমাকে গরু পালনের পরামর্শ দেন। তিনিই তার অফিস থেকে আমাকে দুটো গরু কেনার জন্য লোনের ব্যবস্থা করে দেন।
সেই টাকা দিয়ে আমি গরু কিনি। তারপর থেকে আমাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে আমার খামারে ৬৭ টি গরু, ১৫টি মহিষ আছে। এছাড়াও বেশ কিছু হাঁস-মুরগীও রয়েছে।
এক সময় গবাদি পশু খাতে বাংলাদেশে ছিল ব্যাপক সংকট। আর এই সংকট থেকেই দেখা দিয়েছে সম্ভাবনা। বর্তমানে গরু এবং ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।
অথচ কয়েক বছর আগেও দেশে মাংসের চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আর মায়ানমার থেকে আমদানি করতে হত গরু। এমনকি কোরবানির ঈদের সময় এই দুই দেশ থেকে আমদানি হত প্রায় ২০ লাখ গরু। আর এখন প্রতি বছর প্রায় ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে গবাদিপশুর খামার। সূত্র মতে, বাংলাদেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সাধারণ মানুষ খামার করার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মূলত সরকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। আর খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামের গরিব-দুঃখী মানুষ যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি দেশে মাংসের চাহিদাও মিটছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বাংলাদেশের গবাদিপশুর জাতগত বৈচিত্র্য নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের গরুর চারটি জাত বৈশ্বিকভাবে উন্নত জাত। চট্টগ্রামের লাল গরু, পাবনা গরু, উত্তরবঙ্গের ধূসর গরু ও মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের গরুর মাংসের মান ও স্বাদ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা।
ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের গরু, ছাগল ছাড়াও ভেড়া, ঘোড়া ও মহিষের অনেকগুলো ভালো জাত আছে। সেগুলো থেকে উন্নত মানের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসায় গবাদিপশু লালনপালন, বিশেষ করে কেনাবেচায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে গেছে। লালনপালনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই খাতে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পিকেএসএফ।
জোবেদা বলেন, আমার দেখাদেখি পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের নারীরা খামার করছে। যদিও তাদের খামার এখনো ছোট পরিসরে। তবে সেসব খামারও একসময় আরো বড় হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ রাখলে তারা যে কোন সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। যার ফলে আমরা কোন রোগ-ব্যাধি ধরা পড়লে তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি। এছাড়াও আমার খামারে গ্রামের বেশ কিছু পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। এখানে কাজ করে তারা বেশ ভালো আয় করছে।