শিরোনাম

চট্টগ্রাম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, কর সমন্বয়ের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) নিট মুনাফা হয়েছে ৩০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা সংস্থাটির ৫৪ বছরের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএসসির মোট আয় ছিল ৫৯৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং ব্যয় ছিল ৩১১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ২৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বিএসসির নিট আয় বেড়েছে প্রায় ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে আয়োজিত বিএসসি-এর ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ তথ্য প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক। বিএসসি সচিব আবু সাফায়াৎ মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সাধারণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী। এছাড়াও বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ ও শেয়ারহোল্ডারগণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিএসসির পরিচালন আয় ছিল ৫৯০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় হয়েছে ২০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৭৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে, পরিচালন ব্যয় ছিল ২৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় হয়েছে ১২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে মাফিয়াচক্র আছে। ৪০ বছর বন্দর একই প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। নতুন কাউকে আসতে দেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে একটি গোষ্ঠী বন্দরকেন্দ্রিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল, যার ফলে সংশ্লিষ্ট খাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও লাভ সম্ভব হয়নি।
এই মাফিয়াচক্রের কারণেই বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন অতীতে লাভবান হতে পারেনি বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, এবার ৫৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় করেছে শিপিং করপোরেশন। চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে সরকার প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামসহ পুরো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বলেন, বিএসসি পরিচালনা পর্ষদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিট মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) প্রদানের সুপারিশ করে। নিজস্ব অর্থায়নে নতুন জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনার কারণে গত বছরের সমপরিমাণ লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে লাভের ধারা অব্যাহত থাকলে লভ্যাংশের হার আরও বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় উন্নয়ন প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে জানানো হয়, সরকারের দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতায় বিএসসি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় বহরে নতুন বাণিজ্যিক জাহাজ সংযোজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে চীন সরকারের ঋণ সহায়তায় ৬টি নতুন জাহাজ ক্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে বর্তমানে ৫টি জাহাজ বিএসসির বহরে রয়েছে।
এছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ অর্জনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি জাহাজ ইতোমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে এবং অপরটি ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে সরবরাহের কথা রয়েছে।
সরকারি ও নিজস্ব অর্থায়নে নতুন ট্যাংকার ও বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয়ের পাশাপাশি জি-টু-জি ভিত্তিতে ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার ও মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কনটেইনার পরিবহন খাতে অংশগ্রহণ বাড়াতে ১২টি নতুন কনটেইনার জাহাজ অর্জনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে বলে সাধারণ সভায় জানানো হয়।
সাধারণ সভায় শেয়ার হোল্ডারদের পক্ষ থেকে কবির আহমদ চৌধুরী, আলহাজ আব্দুল ওহাব, হরিলাল বণিক, আব্দুল কাদের ও আলমগীর হোসেন বক্তব্য রাখেন।