শিরোনাম
ঢাকা, ৬ জুন, ২০২৫ (বাসস): রাত পোহালেই মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় প্রধান উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরবানির ঈদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা কোরবানি দেবেন তারা ইতোমধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল কিনে রেখেছেন, কেউ কেউ আজ শুক্রবার শেষরাত পর্যন্ত কিনবেন। আগামীকাল শনিবার ঈদের জামায়াত শেষে পশু কোরবানি দেবেন তারা।
ঈদকে সামনে রেখে চাহিদা বেড়েছে কসাইদের। নিয়মিত কাজ করেন এমন কসাইয়ের পাশাপাশি মৌসুমী বা ছুটা কসাইয়েরও চাহিদা বেড়েছে। সারা বছর অন্য কাজ করলেও কোরবানির ঈদে বাড়তি আয়ের আশায় একদিনের জন্য কসাই বনে যান তারা।
ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই অনেক শ্রমিক, দিনমজুর ও রিকশাচালক নিজেদের কাজ ছেড়ে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে এসে বেপারীদের সঙ্গে কাজ করছেন এবং যারা কোরবানির পশু কিনছেন তাদের সঙ্গে চুক্তি করছেন কসাইয়ের কাজের জন্য। গরুর দাম এর ওপর তাদের শ্রমের মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে পেশাদার কসাইয়ের চেয়ে মৌসুমি কসাইয়ের মজুরি কিছুটা কম।
মৌসুমি কসাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে তারা এ কাজে নিযুক্ত পেশায় থাকেন না। তখন তাদের কেউ রিকশা চালায়, সবজি বিক্রি করে কিংবা ভ্যান চালায়, নতুবা দিনমজুর, নিরাপত্তারক্ষী, নৈশপ্রহরী, হকারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঈদের এই ছুটিতে তাদের কাজ না থাকায় ও কসাইয়ের কাজ করে বাড়তি ইনকামের আশায় তারা হয়ে গেছেন মৌসুমী কসাই। যারা কোরবানি দেবেন তারাও রাস্তায় বেরিয়েছেন কসাইদের খুঁজে। দর দাম করে তারা চুক্তি করছেন কসাইদের সঙ্গে। জবাই ও মাংস কাটাকুটি থেকে শুরু করে বণ্টনের চুক্তিতে তারা কাজ দিচ্ছেন।
তারা আরো জানান, গরুর দাম ও ওজন অনুযায়ী তারা কসাইয়ের কাজ পাচ্ছেন। গরুটি ঠিক কতো টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে কসাইরা তাদের মজুরি ঠিক করে নেন। আবার অনেকে গরুর সাইজ ও ওজন দেখেও মূল্য নির্ধারণ করেন। প্রতি হাজার টাকার গরুর বিপরীতে তারা মজুরি নির্ধারণ করছেন ১২০ থেকে ২০০ টাকা করে।
রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় দেখা মিলল একদল মৌসুমী কসাইয়ের। তারা এসেছেন উত্তরের জেলা গাইবান্ধা থেকে। এই দলের নেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, গাইবান্ধা থেকে এবার প্রায় ৩০০ কসাই ঢাকায় এসেছেন। আমার দলে রয়েছেন ১৫ জন সদস্য। বড় গরু পেলে ২টি ও ছোট গরু পেলে ৩টি দলে আমরা ভাগ হয়ে কাজ নেব। আজ শুক্রবার সকালেই ঢাকায় এসে নেমেছি। ঈদের দিন সন্ধ্যায় আবার বাড়ি ফিরে চলে যাব। গত ৫ বছর ধরে আমি নিয়মিত ঢাকায় কসাইয়ের কাজ করতে আসি।
রাজধানীর লালবাগে কথা হয় নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, একটা বাসায় দারোয়ান হিসেবে কাজ করি। প্রতিবছর ঈদের আগে ২ দিনের ছুটি নিয়ে কসাইয়ের কাজ করি। এবার ছুটি নিতে হয়নি বাসার এক স্যারের গরু কাটার কাজ পেয়েছি। এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে স্যার গরু কিনেছেন, হাট থেকে গরু আনতে আমিও গিয়েছিলাম। স্যার আমাকে গরু জবাই ও মাংস কাটাকুটির কাজ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৮ হাজার টাকা পাব এ কাজ করে। আমাকে সহযোগিতা করার জন্য ৩ হাজার টাকা দিয়ে একজনকে নিয়েছি। বাকি ১৫ হাজার টাকা আমার। দেখছি আরও একটা কাজ পাই কিনা।
ভ্যানচালক সুজন মিয়া বলেছেন, নিজ এলাকায় কোরবানির মাংস পাওয়া যায় না। তাই প্রতিবছর কোরবানির দিন কসাইয়ের কাজ করে যেটুকু মাংস পাই তা নিয়ে বাড়ি যাই। তিনি বলেন, ঈদের দিন সারাদিন কসাইয়ের কাজ করে যে মাংসটুকু পাই তা আমার এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে ফ্রিজে রাখি। পরদিন সেই মাংস নিয়ে গ্রামের বাড়ি রংপুরে চলে যাই।
আজিমপুর কলোনির বাসিন্দা এরশাদুর রহমান বলেন, কোরবানির দিন পেশাদার কসাই একটি কোরবানির গরু কাটতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন। সেখানে মৌসুমি কসাইদের সাত থেকে আট হাজার টাকা দিলেই কাজ করে দিচ্ছেন। সঙ্গে কয়েক কেজি কোরবানির মাংস দিলে তারা অনেক খুশি হয়।
এ ব্যাপারে শেখ সাহেব বাজার এলাকায় বসবাসকারী পেশাদার কসাই আলাউদ্দিন বলেন, ঈদের দিন সকালে ৪টি গরু বানানোর অর্ডার পেয়েছি। প্রতি হাজার ২০০ টাকা করে রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন পেশাদার কসাইয়ের বানানো মাংস আর মৌসুমী কসাইয়ের বানানো মাংসের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। আমরা কৌশল করে হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করি এবং হাড়গুলো অত্যন্ত সুন্দর করে বানানো হয়। এক্ষেত্রে চামড়া নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তাই তাদের চেয়ে আমাদের রেট একটু বেশি।