বাসস
  ০৩ জুন ২০২৫, ১৮:৪০

কোরবানির বাজার জমবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার

ছবি : সংগৃহীত

কবির আহমেদ খান

ঢাকা, ৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : আতিক হাসান স্বপন, বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে, আজ মঙ্গলবার ভোরে তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খালি জায়গায়  কোরবানির পশুর হাটের বাজারে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন। প্রতিটি গুরু ১লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার দাম হাকিয়েছেন তিনি। পাবনা থেকে ইকরাম হোসেন ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন সোমবার রাতে। আর চুয়াডাঙ্গার মহিদুল ইসলাম ২২টি কোরবানির হাটে এনেছেন বিক্রির উদ্দেশ্যে।

নাখালপাড়ার আকতার হোসেন আজ দুপুরে এই হাটে এসেছেন কোরবানির গরু কিনতে, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনতে চান। আজ দেখলেন, দাম-দর যাচাই বাছাই করলেন। কিনবেন দু’একদিন পরে। এদের সবার বক্তব্য একই ধরনের, আপাতত আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবার সবাই কোরবানির গুরু হাটে দেখছেন, পরখ করছেন। কিন্তু কিনবেন বৃহস্পতি অথবা শুক্রবার। সবারই একই টার্গেট, ক্রেতা-বিক্রেতার মতো একই বক্তব্য বাজার ডাক নেয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও। সে হিসাবে বাজার জমবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার। একই চিত্র রাজধানীর ১৯টি কোরবানির বাজারের বলে জানা গেছে।

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে সরেজমিনে ঘুরে কোরবানির হাটের চিত্র এমনটাই দেখা গেছে।  বাজারটি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে, বাজারের ডাক পেয়েছেন জায়ান এন্টারপ্রাইজের মনিরুজ্জামান মনির, বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা আবু বকর বাকের বাসসকে বলেন, এবার বাজারে প্রচুর গরু আসছে, প্রতি বছরই মূলত ঈদের আগে শেষ তিন দিন বিক্রি বেশি হয়ে থাকে, এর আগে দাম-দর যাচাই-বাছাই করে। বিক্রেতারাও এ সময় দাম ছাড়তে চায় না, ক্রেতাও তার বাজেটের মধ্যে খুঁজতে থাকে। সে হিসেবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাজারে বিক্রি বেড়ে যাবে।

এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র তিন দিন বাকি। এ বছর স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় কোরবানির হাট বসেছে মোট ১৯টি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসছে ১২টি পশুর হাট এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বসছে ৭টি পশুর হাট। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় এখনো একটি হাটে ইজারা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। আর দক্ষিণ সিটিতে আরও দুটি হাটের ইজারার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠের খালি জায়গায়  বসা বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অভিমত, এ বাজারে গত ঈদুল আজহায় বিক্রি হয়েছিল ১০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু, এবার তেজগাঁও এলাকায় অন্য কোন বাজার না বসায় ২০ হাজার কোরবানির পশুর আগমন ও বিক্রি হবে। এখন পর্যন্ত দাম নিয়েও তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমন একজন ক্রেতা আকতার হোসেন বলছেন, দাম বেশি মনে হয়নি, তবে নিজের বাজেট অনুযায়ী গরু কিনবো। বাজারের ডাক পাওয়া জায়ান এন্টারপ্রাইজের একজন প্রতিনিধি দিদার হোসেন বলেছেন, এখন পর্যন্ত বিক্রি কম, বিক্রেতা দাম ছাড়ছে না, ক্রেতাও তার টার্গেটের মধ্যে থাকছে। তিনি আশা করেন, বাজারে যত গরুই আসুক শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।

এ বাজারে ৭০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৯ লাখ টাকার গরু উঠেছে। কুমিল্লার লালমাই উপজেলা থেকে আমানউল্লাহ ৩০টি গরু নিয়ে এসেছেন। প্রতিটি গরুর রয়েছে নিজস্ব নাম যেমন-‘হামজা’ নামে গরুর দাম হাঁকছেন ১৯ লাখ, ‘মাফিয়া’ ১৮ লাখ, ‘রুস্তম’ ১৬ লাখ। তার আনা গরু ৮ লাখ থেকে দাম চাওয়া হচ্ছে। 

তবে বাজারে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের গরুর চাহিদা বেশি।

এদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুবিধার্থে বাজারে ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য আইএফআইসি ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শুধু ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপির মাধ্যমে হিসাব খুলে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে বা কিউআরকোড স্ক্যানের মাধ্যমে ইনস্ট্যান্ট ফান্ড ট্রান্সফারের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান আইএফআইসি ব্যাংকের এটিএম সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্টের টিম লিডার কাকন চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জানান, রাজধানীর ১৯টির মধ্যে  ১১টি  কোরবানির হাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য ইনস্ট্যান্ট ফান্ড ট্রান্সফারের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস)প্রাথমিক হিসাব মতে, দেশে এবার ১ লাখ কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রি হবে। এর মধ্যে অনলাইনে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি পশু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে দেশে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার (গরু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়া) পশুর মধ্যে ৭০ শতাংশ সরবরাহ করা হবে দেশের তিনটি বিভাগ থেকে। এবারের কোরবানিতে চাহিদার অতিরিক্ত ২০ লাখ ৬৮ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

ডিএলএস পরিচালক ড. এবিএম খালেদুজ্জামান বাসস’কে বলেন, চলতি ২০২৫ সালে কোরবানির জন্য আট লাখ ৮৭ হাজার ৫৪৪টি খামারে এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতেই রয়েছে ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯টি, দ্বিতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪টি এবং খুলনা বিভাগে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮৭টি। রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনা এই তিন বিভাগে মোট কোরবানির পশুর প্রায় ৭০ শতাংশ জোগান দেবে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ আসবে শুধু রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সম্প্রতি সচিবালয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘দেশীয় পশুতেই এবারের কোরবানি করা সম্ভব হবে। স্থানীয় পর্যায়ে পশু উৎপাদন বেড়েছে। যে কারণে পশু আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। পশু অনুপ্রবেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের কোরবানির অর্থনীতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে।’

এবার ঈদুল আজহায় উত্তর সিটির আওতাধীন একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া অস্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে-খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন খালি জায়গার হাট, তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন খালি জায়গার হাট, উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরু সংলগ্ন বউ বাজারের খালি জায়গার  হাট, মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গার  হাট, মোহাম্মদপুর এলাকার বছিলা ৪০ ফুট সড়ক সংলগ্ন খালি জায়গার  হাট, উত্তরা-১০ নম্বর সেক্টর-সংলগ্ন রানাভোলা অ্যাভিনিউ খালি জায়গার হাট, ভাটারা সুতিভোলা খালের পাশে খালি জায়গার হাট, খিলক্ষেতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের খালি জায়গায়  হাট, কাচকুড়া বাজার-সংলগ্ন রহমাননগর হাট, মেরুল বাড্ডা কাঁচাবাজার হাট এবং রামপুরার পূর্ব হাজিপাড়ার ইকরা মাদ্রাসার খালি জায়গায়  হাট।

এছাড়া দক্ষিণ সিটি এলাকায় হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে-উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গায় হাট, ডেমরার আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গায় হাট, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পাশে নদীর পাড়ে খালি জায়গায় হাট, দনিয়া ক্লাবের পূর্ব পাশে ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার পশ্চিমের খালি জায়গায় হাট, লালবাগের পোস্তা এলাকায় রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি হাট এবং হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গায় হাট। এছাড়া দক্ষিণ সিটির আওতাধীন স্থায়ী পশুর হাট সারুলিয়াতেও কোরবানির পশু বিক্রি হবে।