বাসস
  ২৭ মে ২০২৫, ১৫:২২

আম লিচুর দাপটে সরগরম বাদামতলি ও ওয়াইজঘাটের আড়ত

ছবি : বাসস

।। মাহামুদুর রহমান নাযীদ ।।

ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : জ্যৈষ্ঠ মাসে মূলত রসালো সব ফল রাজত্ব করে। আর তাই, জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে এসে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাদামতলি ও ওয়াইজঘাট এলাকার ফলের পাইকারি আড়তগুলো যেন পরিণত হয়েছে এক ফলের উৎসবে।

দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাকভর্তি হিমসাগর, রূপালি, ল্যাংড়া জাতের আমের সঙ্গে বোম্বাই, বেলারি ও চায়না-৩ জাতের লিচু আসছে দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ এই ফলের পাইকারি বাজারে। সকাল হতেই আড়তের গুদামগুলোতে জমে উঠছে ফলের স্তূপ, চলছে দরদাম, আর আড়তজুড়ে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা। 

 বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ঘিরেই মূলত ফলের রাজত্ব শুরু হয় বাদামতলি ও ওয়াইজঘাটে। বর্তমানে বাদামতলি ও ওয়াইজঘাট আড়তজুড়ে শুধুই আম-লিচু নয়, মিলছে আনারস, তরমুজ, তালসহ গ্রীষ্মকালীন নানা রসালো ফল। প্রতিদিন ভোর থেকেই আড়তের অলিগলিতে শুরু হয় কোলাহল, শহরের ফলের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আড়তদার ও বিক্রেতারা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে "চায়না-৩" জাতের লিচু। দিনাজপুর ও পাবনা থেকে আসা এই জাতের লিচু আড়তে পাইকারি প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায়। খুচরা বাজারে এসব লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০০টি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। রাজশাহী, দিনাজপুর ও পাবনার ঈশ্বরদী থেকে বাজারে আসা বোম্বাই জাতের লিচু আড়তে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দরে। খুচরা বাজারে প্রতি ১০০টি বোম্বাই লিচুর দাম পড়ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। অন্যদিকে দিনাজপুরের বিখ্যাত বেলারি লিচু পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা দরে, আর খুচরা বাজারে তা মিলছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।

লিচু ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি সময়ে লিচুর চাহিদা অন্যান্য ফলের তুলনায় বেশি। প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা, আর সামনে ঈদুল আজহার সময় চাহিদা আরও কয়েক গুণ বাড়বে বলে ধারণা করছেন আড়তদাররা।

সরেজমিনে আমের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে আম সাধারণত বিক্রি হয় ক্যারেট হিসাবে, প্রতিটি ক্যারেটে থাকে প্রায় ২২ থেকে ২৩ কেজি আম। আমের আকার, জাত ও গুণমান অনুসারে এর দাম নির্ধারিত হয়।

যশোর ও সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে আসা জনপ্রিয় "হিমসাগর" জাতের আম পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। খুচরা বাজারে এই আমের দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। এদিকে রাজশাহী, যশোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা "ল্যাংড়া" আম পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়। খুচরা বাজারে এই জাতের আম মিলছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। যশোর থেকে আসা আরেকটি জাত "রূপালি" আম পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি দরে, আর খুচরা বাজারে এর দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি আড়তে আসে অপেক্ষাকৃত সস্তা ও সাধারণ মানের "গুটি" আম। এই জাতের আম পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে।

বাদামতলি ফলের আড়তের সিয়াম এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মো. রবিন বলেন, "এখন বাজারে আমের সরবরাহ অনেক, ক্রেতাও ভালো। তবে, বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনেক বাগানে এখনো আম পুরোপুরি পরিপক্ক হয়নি, ফলে কিছুটা সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। সাধারণত সাতক্ষীরার আমগুলো ঈদের প্রায় ১০দিন পর থেকে বাজারে আসবে বলে আমরা আশা করছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম আকারে বড়, দেখতে আকর্ষণীয় এবং স্বাদের চমৎকার হয়। ঈদের পর এসব আম বাজারে এলে ক্রেতার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের আড়ত থেকে শুধু ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নয়, নোয়াখালীর হাতিয়া, বরিশালের কিছু অঞ্চল ও লঞ্চে করেও নিয়মিতভাবে ফল সরবরাহ করা হয়।"

বরিশালগামী লঞ্চের যাত্রী শাহজাহান ওয়াইজঘাটে খূচরা লিচু কিনছিলেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারসহ ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি, তাই প্রিয়জনদের জন্য কিছু লিচু কিনলাম। যদিও দাম একটু বেশি, তবে লিচুগুলোর আকার ও রঙ-রূপ এতটাই ভালো যে দাম নিয়ে অভিযোগ করার কিছু নেই।"