শিরোনাম
কাশেম মাহমুদ
ঢাকা, ১৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে চট্টগ্রাম ওয়াসা জরাজীর্ণ ও পুরোনো ৩শ’ কিলোমিটার ‘সার্ভিস কানেকশন’ নতুন করে পুনঃস্থাপনের কাজ জুন মাসেই শুরু করতে যাচ্ছে।
এই প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর দীর্ঘদিনের পুরোনো পাইপ অপসারণ করে, ৩শ’ কিলোমিটার নতুন পাইপ প্রতিস্থাপন ও ১ লাখ গ্রাহককে ডিজিটাল মিটারের আওতায় আনা হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগসহ প্রাথমিক প্রক্রিয়া আগামী জুন মাসে শুরু হবে। এখন সব কিছু গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে, যাতে ডিসেম্বর নাগাদ টেন্ডার আহ্বানসহ মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করা যায়। চট্টগ্রাম ওয়াসার লক্ষ্য হচ্ছে, চুক্তির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বাসস’কে জানিয়েছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং সরকার দেবে ৫৭৮ কোটি। এ প্রকল্পে চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে ৭৪ কোটি টাকা।
গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিডব্লিউএসআইপি)’-এর আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও আইডিএ’র মধ্যে ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের একটি অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রকল্পটিকে গত ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী ও আইডিএ’র পক্ষে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (অন্তর্বর্তীকালীন) গেইল এইচ মার্টিন এই অর্থায়ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার এই প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরীতে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও জলবায়ু সহনশীল পানি সরবরাহ বৃদ্ধি, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি, চট্টগ্রাম ওয়াসার পরিচালন দক্ষতা উন্নয়ন ও আর্থিক ক্ষমতা টেকসই করা হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম ওয়াসা ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে।
আনোয়ার পাশা জানান, ঋণের শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের স্কেল-আপ উইন্ডোশার্টার ম্যাচিউরিটি লোন (এসইউডব্লিউএসএমএল) থেকে ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ (১০৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন এসডিআর) প্রদান করা হবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৬ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ১২ বছর। এ ঋণের উত্তোলিত অর্থের ওপর কোনো পরিষেবা চার্জ, প্রতিশ্রুতি ফি ও সুদ প্রদান করতে হবে না। অবশিষ্ট ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ২১ বিলিয়ন ৩৪৫ মিলিয়ন ১ লাখ জাপানিজ ইয়েন বিশ্বব্যাংকের স্কেল-আপ উইন্ডো (এসইউডব্লিউ) থেকে প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে ফ্রন্টএন্ড ফি বাবদ শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ প্রদান করতে হবে। এ ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৫ বছর। এ ঋণের অনুত্তোলিত অর্থের ওপর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ প্রতিশ্রুতি ফি প্রদেয় এবং এই ঋণের সুদের হার হবে টোকিও ওভারনাইট এভারেজ রেট (টিওএনএ) ভ্যারিয়েবল স্প্রেড।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার। স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা দৃঢ় করেছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে ৪৭টি চলমান প্রকল্পের জন্য ১৩ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে নগরে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। একইসঙ্গে অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অপচয় রোধ, নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি।
মাকসুদ জানান, মহানগরীর পতেঙ্গা, খুলশী, এ কে খান, বায়েজিদ, অক্সিজেন, কালুরঘাট, চাক্তাই এলাকার ৩০০ কিলোমিটার পুরাতন জরাজীর্ণ পাইপলাইন, লিকেজ, ম্যানুয়াল মিটারিং ব্যবস্থা ও অবৈধ সংযোগের কারণে ৪০ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
উক্ত এলাকাসমূহে সুষম চাপে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ও পানির অপচয় রোধ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকাসমূহে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ১ লাখ অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার লক্ষ্যে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
তিনি বলেন, মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি হাইড্রোলিক জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জোনসমূহের মধ্যে একটি জোন কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়া (কেএসএ), যা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়ায় জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর অধীনে নগরীতে মোট ৮শ কিলোমিটার পুরোনো পাইপ তুলে নতুন পাইপ বসানো (ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইন) হয়েছিল। তাতে এই এলাকায় প্রায় ৪৬ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সুষম চাপে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ওয়াসার ১০ শতাংশ সিস্টেম লস কমেছে।