বাসস
  ১৩ মে ২০২৫, ২৩:২৯

বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ আছে : আমীর খসরু 

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫ (বাসস) : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ আছে। নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির আকাঙক্ষা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে গেলে যে কাজগুলো শুরু হওয়া প্রয়োজন সেগুলো কিছুই এখনো করা হয়নি। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মানুষের কাছে এর আগে কেউ যায়নি। কিন্তু বিএনপি সেটা করছে। কারণ, যেকোনো সংস্কারের জন্য মানুষের সমর্থন দরকার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো সংস্কার সম্ভব নয়।’

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি একথা বলেন। ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, সরকার সেটা জানাচ্ছে না। সরকারের উচিৎ এই বিষয়গুলো জনগণের সামনে পরিস্কারভাবে তুলে ধরা। দেশের যে কোনো গূরত্বপূর্ণ বিষয়ে জানার এবং সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার একমাত্র জনগণের। 

ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পেছনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রচারণাবিমুখ ছিলেন। তিনি দেশের স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক কাজগুলো করে গেছেন। এমনকি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বহু বছর ধরে স্বৈরাচার পতনের লক্ষ্যে কাজ করেছে। ৪২ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এটাই হাসিনার পতনের মূল কারণ ছিল। অথচ একথা কেউ এখন স্বীকার করবে না। 

স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগ সম্ভব নয় উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, যত দিন নির্বাচিত সরকার না আসবে তত দিনে বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ আসবে না। বিনিয়োগ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের শেষ প্রশ্ন ছিল, দেশের নির্বাচন কবে হবে? কারও চেহারা দেখে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী দেশে বিনিয়োগ করবেন না।

পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এগুলো ঠিক হলেই প্রকৃত সংস্কার অর্জিত হবে। দক্ষ প্রশাসক হলে তিন মাসের মধ্যেই এই সংস্কার সম্ভব।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, জুলাই আগস্টের আন্দোলনের শরিকেরা এখন প্রায় বিভক্ত। এখন সবাইকে আরেকবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যেতে হবে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংগ্রাম করে গেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে অনেকের মাঝে প্রতীকী জাফরুল্লাহ চৌধুরী লুক্কায়িত ছিলেন। তাদের সবার আকাঙ্ক্ষা ছিল, বাংলাদেশের প্রকৃত মালিকানা সাধারণ নাগরিকদের হবে। তাই দেশের মানুষকে তাদের প্রকৃত মালিকানা ফিরিয়ে দিতে সবাইকে আবারো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুর কে স্মরণ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশের শিক্ষা কারিকুলামে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবনী সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, আজকের বাংলাদেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। তিনি সবার বন্ধু ছিলেন। অথচ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অনেক নির্যাতন ও কষ্ট দিয়েছিলেন। তিনি এই দেশের ‘চে গুয়েভারা’ ছিলেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী ও নারী নেত্রী শিরীন হক। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যানসার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও ক্যানসার প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের নাগালে ওষুধ পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। 

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। স্মরণসভার সভাপতিত্ব করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল।