বাসস
  ১৩ মে ২০২৫, ১৩:৫৬

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও অর্থায়ন বিষয়ক সেমিনার 

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের কনফারেন্স রুমে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ব্লাস্টের সৌজন্যে

ঢাকা, ১৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও অর্থায়ন নিয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস এন্ড ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গতকাল এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের কনফারেন্স রুমে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও অর্থায়ন : রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে বাংলাদেশের যুক্ত থাকার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয় এবং জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অর্থায়ন ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাখিলকৃত উপস্থাপনাগুলোর সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ - সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ একরামুল হক।

সভায় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ‘উপদেশমূলক অভিমত’ এর জন্য আইসিজের কাছে বাংলাদেশের উপস্থাপনার সারসংক্ষেপ এ আলোচনায় উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট মৌমিতা দাস গুপ্ত এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর আজম তাইফ।

এতে উপস্থিত ছিলেন ব্লাস্টের অনারারি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন,এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস বিশেষজ্ঞ এবং অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মাসরুর সালেকিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক এবং সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এর নির্বাহী পরিচালক মো. শামসুদ্দোহা এবং ড্যানিশ দূতাবাসের প্রোগ্রাম উপদেষ্টা, ক্লাইমেট এবং ক্লাইমেট ফাইন্যান্স বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মতিউল আহসান।

সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক একরামুল হক বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেছে যেটা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। এটি হচ্ছে ইন্টারজেনারেশনাল জাস্টিস বা আন্তঃপ্রজন্মগত সমতা কে প্রতিষ্ঠিত করা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষত আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।

তিনি আন্তঃপ্রজন্মগত ন্যায়বিচারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলো তদারকি করতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একজন কমিশনার নিয়োগের সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের কথাও আলোচনায় উল্লেখ করেন।

ড. মাসরুর সালেকিন বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু-সম্পর্কিত নীতিমালা এবং কর্মপরিকল্পনা রয়েছে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন আইনের অভাব রয়েছে, যার ফলে দৃশ্যমান নীতিগত অপর্যাপ্ততা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে দুটি পরিবেশ আদালত রয়েছে, তবে মামলার সংখ্যা খুবই কম। ভ্রাম্যমাণ আদালত দূষণের জন্য শিল্পগুলোকে জরিমানা করে, তবে এই জরিমানা প্রায়শই উল্লেখযোগ্য দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি ছাড়াই পরিশোধ করা হয়। পরিবেশগত আইন লঙ্ঘনের জন্য দেশে আরও শক্তিশালী আইন এবং বৃহত্তর জবাবদিহিতার প্রয়োজন। বিশেষত, জলবায়ু নিয়ে বিশেষ আইন প্রণয়ন করা দরকার।

সেইসঙ্গে, আইনে পরিবেশ এর পাশাপাশি জলবায়ুকে সংজ্ঞায়িত ও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

সৈয়দ মতিউল আহসান বলেন, বাংলাদেশের ন্যাপ, এনডিসি, ডেল্টা প্ল্যান এবং জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার মতো বিস্তৃত জলবায়ু পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে কর্মক্ষেত্র এবং সূচক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সরকারের সম্পূর্ণ সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।


অধ্যাপক মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ক্লাইমেট জাস্টিসের একটি জাতীয় ন্যারেটিভ থাকতে হবে, এর অর্থ হলো জলবায়ু বিচার হিসেবে আমরা নির্দিষ্টভাবে কি চাই সেটা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে যদি অর্থ নেয়া হয় তবে সে অর্থ কীভাবে খরচ হবে সেটা নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু নিয়ে স্বল্প কিছু জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে, যেমন সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিয়ে। কিন্তু এ মামলায় তেমন ইতিবাচক ফলাফল দেখা যায় নি। মূলত, আন্তর্জাতিক দায়িত্ব জাতীয় পর্যায়ের দায়িত্ব হিসেবে সরাসরি পরিণত হয় না। জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলাফলে স্থানচ্যুতি, জলাবদ্ধতা, উষ্ণতা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিশ্চিত করা উচিত। জলবায়ু ন্যায্যতা নিয়ে সর্বসাধারণের কথা বলা দরকার যেন নিজ অবস্থান থেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা যেতে পারে।

আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন ব্লাস্টের উপদেষ্টা আহমদ ইব্রাহীম।

উল্লেখ্য, ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে, আইসিজে জলবায়ু প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো বহুপাক্ষিক চুক্তি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সর্বজনীন বাধ্যবাধকতার (ইউনিভার্সাল অবলিগেশন) বিষয়ে একটি উপদেশমূলক অভিমতের(এডভাইসোরি অপিনিয়ন) ওপর আলোচনা করছে, যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ) কর্তৃক জলবায়ু সুরক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং উল্লেখযোগ্য ক্ষতির আইনি পরিণতি, যার মধ্যে বহির্দেশীয় প্রভাব এবং আন্তঃপ্রজন্মগত সমতা অন্তর্ভুক্ত। ইতোপূর্বে, ভানুয়াতুর নেতৃত্বাধীন একটি মূল রাষ্ট্রগোষ্ঠীর অংশ হিসেবে বাংলাদেশও এই প্রশ্নমালা প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল।