বাসস
  ১১ মে ২০২৫, ২১:৪১

বঙ্গোপসাগরকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে মুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ

খুলনা, ১১ মে, ২০২৫ (বাসস): সামুদ্রিক দূষণ মোকাবেলায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর বঙ্গোপসাগরকে মানুষের প্লাস্টিক দূষণ থেকে মুক্ত করার জন্য একটি উদ্যোগ শুরু করেছে, যা মৎস্য সম্পদ, মানব স্বাস্থ্য এবং নীল অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আড়াইশ বাণিজ্যিক ফিশিং ট্রলারের বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে না ফেলে কূলে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর। সাগরের দূষণ রোধে গৃহীত এই উদ্যোগ বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে চলমান এই উদ্যোগের ফলে বছরে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন অপচনশীল দ্রব্যের দূষণ থেকে সাগর রক্ষা পাবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্যিক জাহাজে খাবারের প্যাকেট বিশেষ করে পলিথিন ও প্লাস্টিক এবং এমন কি মাছ ধরা ছেঁড়া ও টুকরা জাল, যেগুলো প্রতিনিয়ত সমুদ্রে ফেলে দিত নাবিকরা, তাতে দূষিত হতো সাগর। 

বর্তমানে এসব অপচনশীল দ্রব্য সাগরে ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে কূলে নিয়ে আসছেন নাবিকরা। সাগরে দূষণরোধে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসাইন সাগর এটির সার্বিক তদারকি করছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসাইন সাগর বাসসকে বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ থেকে সমুদ্র ও সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পরিকল্পনা গ্রহণ করি যে, কীভাবে সাগরে প্লাস্টিক, পলিথিনসহ অপচনশীল দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নাবিকরা মাছ আহরণ করতে সারা বছরই সাগরে যায়। একটি ট্রলারে ক্ষেত্র বিশেষে ৩০ থেকে ৫০ জন নাবিক একসাথে সাগরে যায়। একবার সাগরে গেলে তারা  ১৫ থেকে ৩০ দিন মৎস্য আহরণ করে। এ সময়ে যত খাবার প্রয়োজন হয়, সবকিছু তারা চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে যায়। ক্রয়কৃত খাবারের বেশিরভাগই পলিথিন মোড়ানো। সাধারণত জাহাজে খাবার শেষে এসব পলিথিন সাগরে ফেলে দেয় নাবিকরা। অথচ নিক্ষেপকৃত পলিথিন, প্লাস্টিক এমন কি ছেঁড়া ও টুকরো জাল যেগুলো অপচনশীল দ্রব্য সেগুলো সমুদ্র দূষণ করে। সাগরে এসব অপচনশীল বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে মাছের আবাসস্থল ধ্বংস, সমুদ্র দূষণ, সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট, ঘোস্ট ফিশিং, মাছের খাদ্য শৃঙ্খল নষ্ট, মাছের প্রজনন ব্যাহতসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। এমন কি প্লাস্টিক ও পলিথিন মাছের শরীরে চলে আসে। এসব মাছ খেলে মানব শরীরে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। এ কারণে দূষণ প্রতিরোধে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে একটি পত্র জারি করা হয়। সকল বাণিজ্যিক ফিশিং ট্রলারের মালিকের কাছে এসব চিঠি প্রেরণ করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমেও সকল ট্রলার মালিককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। একইসাথে সমুদ্রগামী সকল ফিশিং ট্রলারে ডাস্ট বিন রাখতে ট্রলার মালিকদের অনুরোধ করা হয়। সমুদ্রে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত প্রায় ২৫০টি ফিশিং ট্রলারে বর্তমানে অপচনশীল বর্জ্য বিশেষ করে প্লাস্টিক ও পলিথিন এসব ডাস্ট বিনে ফেলা হচ্ছে। পরবর্তীতে এগুলো কূলে এনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত আবর্জনা ফেলানোর জায়গায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

ফারুক হোসাইন সাগর আরো বলেন, সাগর থেকে ফেরার পথে ২৫০টি ফিশিং ট্রলার মাসে এক থেকে দুই মেট্রিক টন অপচনশীল বর্জ্য নিয়ে আসছে। তাতে বছরে বর্জ্য আসবে ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন। অথচ ডাস্ট বিন ব্যবহার না হলে এসব বর্জ্য সাগরে নিক্ষেপ হতো। তাতে দূষণের শিকার হতো সাগর। তাছাড়া সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সাগরে প্রায় ৩০ হাজার যান্ত্রিক নৌযান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ কাজে এসব যান্ত্রিক নৌযানকেও আওতায় আনা হবে। এর মাধ্যমে সমুদ্র মৎস্য সম্পদের দীর্ঘ মেয়াদি সংরক্ষণ ও টেকসই আহরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার বাসসকে বলেন, বাণিজ্যিক ট্রলারে সাগরে মৎস্য আহরণ করতে যাওয়ার সময় নাবিকরা পলিথিন ও প্লাস্টিক প্যাকেটে খাদ্য দ্রব্য নিয়ে যায়। 

খাবার শেষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব প্যাকেট সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এসব প্যাকেট অপচনশীল পণ্য। এছাড়াও মাছ ধরা সরঞ্জাম বিশেষ করে ছেঁড়া জাল ব্যবহারের পর ফেলে দিলে দূষিত হয় সাগর। তাতে সাগরের জীববৈচিত্র্য ও মাছের ফুড চেইন নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্লাস্টিক প্রবেশের কারণে মানবদেহে নানা রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোতে ব্যবহৃত পলিথিন কিংবা প্লাস্টিক প্যাকেট কূলে নিয়ে আসার জন্য সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিতে হবে। তাতে দূষণমুক্ত হবে সাগর।