॥ মো. জাহাঙ্গীর কবির ॥
মাদারীপুর, ২৩ মার্চ, ২০২২ (বাসস) : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব, কৈশোর ও রাজনৈতিক জীবনের অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত এই জনপদ। ঘটনাবহুল অনেক সোনালি দিন কেটেছে এখানে। শুধু শৈশব স্মৃতিই নয়, ছেলেবেলা লেখাপড়া করেছেন মাদারীপুর ইসলামিয়া হাই স্কুলে। তাই, ছাত্র জীবনের কিছু সময়, ছাত্র রাজনীতির স্মৃতিময় বেশ কিছুদিন, রাজনীতির মাঠে, বন্ধুত্ব এবং আত্মীয়তার সুবাদে এই জনপদে তাঁর নানা স্মৃতি রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য যারা খুব কাছে থেকে পেয়েছেন তেমনি একজন হলেন পঞ্চাশের দশকের ছাত্রলীগ কর্মী আবদুর রব মৃধা। তিনি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “যতোটুকু মনে পড়ে ১৯৫৪ বা ১৯৫৭ সালের জুলাই মাসের কোনো একদিন বিকেলের দিকে আমি নানার (জিন্নাত আলী খান) কাছে আসি আগামী রাজনৈতিক কর্মসূচির কথা শোনার জন্য। তাঁর ঘরে ঢুকেই বারান্দায় বাম পাশের একটি চেয়ারে বসা এক তেজস্মি পুরুষ। ঘরে ঢুকে সালাম দেওয়া মাত্র নানা (জিন্নাত আলী খান) বললেন এনাকে চেনো, ‘ইনি আমাদের নেতা শেখ মুজিব, ওনার দল করি। ওনাকে চেনো না, কিন্তু তোমরাও ওনার দলের কর্মী। প্রথম পরিচয় হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে দেখে বুকটা ভরে গেলো। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেক করলাম। বঙ্গবন্ধু বললেন, বসো। আমি পাশের একটি টুলে বসে বঙ্গবন্ধু ও নানার মধ্যে চলা কথা শুনছিলাম। তখনো তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি। তাদের কথার অধিকাংশ জুড়ে ছিল রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা। এক পর্যায়ে নেতা আমাকে দেখিয়ে নানাকে বললেন, ‘ওদের কাজে লাগাবেন, এইসব ছেলেই কিন্তু আমাদের দলকে এগিয়ে নেয়ে যাবে। উদ্যোমী পোলাপান দ্বারা অনেক কিছু করা সম্ভব।’
“বঙ্গবন্ধু ওইদিন নৌকায় থানতলী ঘাটে মিটিং করেছিলেন। এই বাড়ি থেকে রান্না করে খাবার নিয়ে আমরা নৌকায় দিয়ে আসি। বিকেলে নাস্তা খেয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য উঠবেন; এমন সময় এলেন ফণিভূষণ মজুমদার, আছমত আলী খান, আবদুল মান্নান শিকদার, কুলপদ্মীর গোলাপ খাঁ, আলী আহম্মদ খান, আবদুল মান্নান (টুনু মান্নান), মহিষেরচরের লতিফ হাওলাদার, চরমুগরিয়ার আবুল ফজল খান, গোলাবাড়ির সুলতান হাওলাদার, পাকদির ইচাহাক মৃধা, স্টুয়ার্ড মুজিব, আবদুল গফুর হাওলাদার, আলী আহম্মদ মাস্টার, মাওলা মজুমদার। বঙ্গবন্ধু আবার বসে তাদের সাথে রাজনৈতিক আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে পূনরায় যাওয়ার জন্য উঠলেন এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে গেলেন। এরপর বেশ কয়েকবার তিনি মাদারীপুরে এসেছেন দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন দেখেছি, কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বড় বড় অক্ষরে হাতে লেখা পোস্টার লাগানোর দায়িত্ব ছিল আমাদের উপর। তাঁর নির্দেশে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বাড়ি থেকে ডেকে এসেছি।”
তিনি বলেন, ‘১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু সারাদেশ সফর করেছিলেন। সেবারও তিনি মাদারীপুরে আসেন এবং নাজিমউদ্দিন কলেজ মাঠে সমাবেশ করেন।
স্বাধীনতা অর্জনের পরে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু মাদারীপুরে এসেছিলেন এবং এ. আর হাওলাদার জুট মিলের মাঠে জনসভা করেন। সেদিন দেখেছি এবং তাঁর ভাষণ শুনেছিলাম। কী কণ্ঠ ছিল তাঁর, ভোলা যায় না। তিনি যে কতো বড় মাপের জনদরদী যে তাকে না দেখেছে সে অনুভব করতে পারবে না। সেদিন জুট মিল মাঠের জনসভার বক্তৃতার কয়েকটি কথা আমার মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘৯ মাসে ওরা আমার সোনার বাংলাকে শ্মশান করে দিয়ে গেছে। এবার এই সোনার বাংলাকে আবার সাজাতে হবে। আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। আমি শেখ মুজিবুর রহমান কিছুই না-আপনারাই সব। তাই, আপনাদের সাথে নিয়েই আমার সোনার বাংলা গড়বো।’
‘পাহাড়ের মতো মানুষটাকে বেঈমানরা মেরে ফেললো’ বলেন আবদুর রব মৃধা।